ইরানের বিপ্লবী গার্ডকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করল কানাডা

ইরানের বিপ্লবী গার্ডকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করল কানাডা

ছবি: সংগৃহীত

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড কর্পসকে (আইআরজিসি) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে কানাডা। কয়েক বছর ধরে কানাডার বিরোধী আইনপ্রণেতাদের পাশাপাশি ইরানি প্রবাসীদের দাবির মুখে এই পদক্ষেপ নিল অটোয়া। বুধবার (১৯ জুন) কানাডার জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ডমিনিক লেব্লাঙ্ক এই ঘোষণা দেন। তিনি তার সরকারের এই পদক্ষেপকে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি তাৎপর্যপূর্ণ হাতিয়ার বলে বর্ণনা করেন।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এই খবর জানায়।

কানাডার জননিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ডমিনিক সাংবাদিকদের বলেন, অটোয়া এই পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি শক্ত বার্তা দিচ্ছে। বার্তাটি হলো, আইআরজিসির সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কানাডা তার হাতে থাকা সব উপায় ব্যবহার করবে।

ইরানের শাসকগোষ্ঠী দেশে ও দেশের বাইরে ক্রমাগত মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ডমিনিক। তিনি বলেন, একইসঙ্গে দেশটি আন্তর্জাতিক আইনকানুনভিত্তিক নিয়মশৃঙ্খলাকে অস্থিতিশীল করতে চায়।

আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অর্থ হলো, ইরান সরকারের হাজারো জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কানাডায় প্রবেশ করতে পারবেন না। তাদের মধ্যে আইআরজিসির কর্মকর্তাও আছেন।

আইআরজিসিকে একটি অভিজাত বাহিনী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটির সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই বাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সঙ্গে এই বাহিনীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

আইআরজিসির প্রায় দুই লাখ সক্রিয় সদস্য রয়েছেন। এর নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনী রয়েছে। তারা ইরানের কৌশলগত অস্ত্রের তদারক করে। শুধু ইরান নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়েই বাহিনীটির প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন মিত্রদেশের সরকারসহ তেহরানপন্থী সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে তারা অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে।

কুদস ফোর্স নামে আইআরজিসির একটি শাখা আছে। এই শাখার মাধ্যমে দেশের বাইরে অভিযানসহ তৎপরতা চালায় ইরান। কুদস ফোর্সকে আগেই ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে কানাডা। তবে গতকাল তারা পুরো আইআরজিসিকেই ‘সন্ত্রাসী সংগঠনের’ তালিকাভুক্ত করল।

আইআরজিসিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত করায় কানাডায় অবস্থান করা ইরান সরকারের অনেক সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাকে তদন্তের মুখে পড়তে হতে পারে। এমনকি তাদের কানাডা থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে।

কানাডার এই সিদ্ধান্তের কারণে ইরানে অবস্থানরত কানাডীয় নাগরিকেরা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন বলে সতর্ক করেছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি। তার আশঙ্কা, ইরানে কানাডার নাগরিকদের নির্বিচারে আটক করা হতে পারে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো আগে আইআরজিসিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, এই পদক্ষেপ নেওয়া হলে কানাডায় অবস্থান করা অনেক ইরানিরা অন্যায্য আচরণের শিকার হতে পারেন, যারা ইরানের বর্তমান শাসকদের বিরোধিতা করেন, দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তবে তারা অতীতে আইআরজিসিতে কাজ করেছেন।

এর আগে, ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র আইআরজিসিকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। যুক্তরাজ্যও একই ব্যবস্থা গ্রহণের আভাস দিলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।