বগুড়ায় রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক

বগুড়ায় রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক

প্রতীকী ছবি

বগুড়ার শেরপুরে চলতি বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব বেড়েছে। এরপর বিলুপ্ত প্রায় বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের নতুন করে বিচরণ দেখা যাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এই উপজেলার মানুষ। 

তাদের দাবি, প্রায় প্রতিদিনই সাপের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। কিন্তু সে অনুযায়ী স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নেই তেমন প্রস্তুতি। এমনকি প্রতিষেধক টিকা-অ্যান্টিভেনম রয়েছে একেবারেই অপ্রতুল। নেই ইনজেকশন পুশ পরবর্তী আইসিইউ এর ব্যবস্থা। তাই সাপে কাটা রোগীদের প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত ছয়মাসে পৌরসভাসহ এই উপজেলার দশটি ইউনিয়নে সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক মানুষ। এরমধ্যে বেশির ভাগ রোগী স্থানীয়ভাবে গ্রাম্যভাবে কবিরাজী চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে গুরুতর নয়জন রোগী স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে সুমাইয়া খাতুন নামের এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গত ৩০ মার্চ রাতে উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের খাগা গ্রামে ওই সাপে কাটার ঘটনাটি ঘটে। নিহত সুমাইয়া খাতুন ওই গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে এবং শেরপুর টাউন ক্লাব পাবলিক লাইব্রেরি মহিলা অনার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। নিহতের স্বজনরা জানান, সুমাইয়া খাতুন বাড়ির পাশের  গোয়াল ঘরে মুরগির খাবার দিতে যায়। তখন তাকে একটি বিষধর সাপ কামড় দিলে সে গুরুতর আহত হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক আমিরুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব একটু বৃদ্ধি পায়। এনিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। কারণ আমাদের এখানকার বেশিরভাগ সাপের কোনো বিষ নেই।
কথিত কবিরাজ (ওঝা) কালু মিয়া ও রমজান আলী বলেন, প্রায় দিনই তাদের বাড়িতে সাপে কাটা রোগী আসছেন। সাধ্যনুযায়ী তাদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। আধুনিক চিকিৎসা ছাড়া ঝাড়-ফুয়ের ভিত্তি নেই, তারপরও সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ওই দুই কবিরাজ বলেন, আক্রান্ত ভালো হয়, বলেই তো আমাদের কাছে আসে। তাই এক্ষেত্রে আমাদের কী করার আছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই উপজেলায় প্রায় পাঁচ লাখ লোকের বাস। তাদের মধ্যে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক চরম আকার ধারণ করেছে। এছাড়া সাপ কামড় দিলে স্বাস্থ্য বিভাগে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। এরপর দুর্লভ প্রজাতির মারাত্মক বিষধর রাসেলস ভাইপার বিস্তারে মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিলেও স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে নেই প্রতিষেধক টিকা অ্যান্টিভেনম। এছাড়া এখানে সাপে কাটা রোগী এলে লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় টিকার প্রয়োগ করতে ঝুঁকি নিতে চান না চিকিৎসকরা। তাই এই ধরণের রোগী এলে তাদের সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) ও বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে।

তবে রাসেল ভাইপার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই দাবি করে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে সাপের উপদ্রব বাড়লেও এই উপজেলায় রাসেল ভাইপারের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। সাপে কাটার পর মানুষ বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। তাদের প্রচলিত ভুল ধারণা, সাপে কাটলেই মানুষের মুত্যু হবে। কিন্তু ৮০ শতাংশ সাপের কামড়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সাপ কামড় দিয়ে তার কোনো বিষ নেই। সাপের কামড়ের পর রোগীকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা নেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, বর্তমানে আমাদের সংগ্রহে দুই ডোজ টিকা-অ্যান্টিভেনম রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে অ্যান্টিভেনম চেয়ে চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই পাওয়া যাবে।