একজন প্রকৃত মুমিনের গুণাবলি ও পরিচয়

একজন প্রকৃত মুমিনের গুণাবলি ও পরিচয়

ছবি: সংগৃহীত

মুমিন তাকে বলা হয় যিনি আল্লাহ তায়ালাকে একইসঙ্গে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন আবার ভয়ও পান। একজন মুমিনের ধ্যানজ্ঞান ইচ্ছা-অভিলাষ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হবেন এক আল্লাহ। আল্লাহর নির্দেশনাবলি সে এমনভাবে মান্য করবে যেন এটাই তার অভ্যাস—আল্লাহর চাওয়াই তার চাওয়া, আল্লাহকে পাওয়াই তার পাওয়া।‘প্রকৃত মুমিন তারাই, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। অতঃপর তাতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করে না এবং তাদের মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে। বস্তুতপক্ষে তারাই হ’ল সত্যনিষ্ঠ’। 

মুমিনের ৭টি গুণ বর্ণনা করে অন্যত্র আল্লাহ বলেন,‘সফলকাম হ’ল ঐসব মুমিন’ (১) ‘যারা তাদের ছালাতে গভীরভাবে মনোযোগী’ (২) ‘যারা অনর্থক ক্রিয়া-কর্ম এড়িয়ে চলে’ (৩) ‘যারা সঠিকভাবে যাকাত আদায় করে’ (৪) ‘যারা নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে’ (৫) ‘নিজেদের স্ত্রী ও অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত। কেননা এসবে তারা নিন্দিত হবে না’ (৬) ‘অতঃপর এদের ব্যতীত যারা অন্যকে কামনা করে, তারা হ’ল সীমা লঙ্ঘনীয়’ (৭) ‘আর যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর। যারা উত্তরাধিকারী হবে ফেরদৌসের। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। 

১. প্রথম গুণ হলো ‘তারা সালাতে গভীরভাবে মনোযোগী’। তারা খুশূ-খুযূর সঙ্গে তন্ময়-তদ্গতভাবে সালাত আদায় করে। এর বিপরীতে আরও দু’প্রকার মুসল্লির কথা এসেছে কুরআনে। একদল মুছল্লী হলো ‘উদাসীন’। আল্লাহ বলেন, فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلاَتِهِمْ سَاهُوْنَ ‘দুর্ভোগ ঐসব মুসল্লির জন্য, যারা তাদের সালাতে উদাসীন’। 

২. ‘যারা অনর্থক কথা ও কাজ এড়িয়ে চলে’। শিরক ও বিদ‘আতসহ সকল প্রকার পাপের কাজ ও বাজে কথাসমূহ এর মধ্যে শামিল। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لاَ يَعْنِيْهِ ‘মানুষের সুন্দর ইসলামের অন্যতম নিদর্শন হ’ল অনর্থক বিষয়সমূহ পরিহার করা’।[2] আল্লাহ বলেন, وَإِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا ‘যখন তারা অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হয়, তখন তারা সম্মান বাঁচিয়ে তা অতিক্রম করে। 

৩. ‘যারা নিয়মিতভাবে যাকাত আদায় করে’। এর দ্বারা অধিকাংশ বিদ্বান মালের যাকাত বুঝিয়েছেন। তবে আয়াতটি মাক্কী। আর যাকাত ফরজ হয়েছে ২য় হিজরিতে মদিনায়। অতএব এর ব্যাখ্যা হল মূল যাকাত ফরজ হয়েছে মক্কায়। কিন্তু তার নিসাব নির্ধারিত হয়েছে মদিনায়। যেমন বলা হয়েছে وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ ‘তোমরা ফসলের নির্ধারিত অংশ আদায় কর তা কর্তনের দিন। 

৪. যারা তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে’। অত্র আয়াতে মুমিন পুরুষকে তার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ব্যতীত অন্যত্র যৌন বাসনা চরিতার্থ করতে নিষেধ করা হয়েছে। অনুরূপভাবে মুমিনা নারী তাদের স্বামী ব্যতীত অন্যকে কামনা করবে না এবং তাদের ক্রীতদাসকেও ব্যবহার করবে না। মুমিন পুরুষ একই সঙ্গে সর্বাধিক চারজন স্ত্রী রাখতে পারে, যদি তাদের মধ্যে ন্যায় বিচার ও সমতা বিধান করতে পারে। কিন্তু একজন মুমিনা স্ত্রী একাধিক স্বামী গ্রহণ করতে পারে না। এটাই আল্লাহর বিধান। এ বিধানের কোনো ব্যত্যয় হবে না। কেউ করলে সে দুনিয়াতে ব্যভিচারের দণ্ড ভোগ করবে অথবা আখেরাতে জাহান্নামি হবে।

৫-৬. ‘যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে’। অত্র আয়াতে দীনি ও দুনিয়াবী কথা ও কাজের সকল প্রকার আমানত বুঝানো হয়েছে। আর আমানতের খেয়ানত করা ও ওয়াদা খেলাফ করা মুনাফিকের বড় লক্ষণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুনাফিকের নিদর্শন হল তিনটি : যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন সে ওয়াদা করে তা খেলাফ করে এবং তার কাছে কিছু আমানত রাখা হলে তার খেয়ানত করে’। আর সবচেয়ে বড় খেয়ানত হল আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করা। যে অঙ্গীকার মানুষ পৃথিবীতে আবাদ হওয়ার আগে তার পালনকর্তা আল্লাহর সঙ্গে করেছিল। যেদিন আল্লাহ তাদেরকে বলেছিলেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই? তারা বলেছিল, হ্যাঁ’ কিন্তু দুনিয়াতে আবাদ হওয়ার পর শয়তানের কুহকে পড়ে তারা সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তওহিদ ভুলে গিয়ে শিরকে পতিত হয়।

৭. যারা তাদের সালাত সমূহের হেফাজত করে’। অর্থাৎ যথা সময়ে নিয়মিতভাবে ও আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করে (নিসা ৪/১০৩)। প্রকৃত প্রস্তাবে এর অর্থ হ’ল সালাতের ওয়াক্ত হওয়া বা আযান হওয়ার সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে উঠে পড়া ও জামা‘আতের জন্য দ্রুত সেদিকে ধাবিত হওয়া, সালাতের রুকু-সিজদা এবং উঠা-বসা সবকিছু সহিহ হাদিস মোতাবেক পূর্ণরূপে আদায় করা ও সর্বোপরি ধীরে-সুস্থে গভীর মনোযোগ সহকারে সালাত আদায় করা।