কঠিন সময়ে সতীর্থদের পাশে পাচ্ছেন সাকিব

কঠিন সময়ে সতীর্থদের পাশে পাচ্ছেন সাকিব

ফাইল ছবি

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম বিতর্কিত এক চরিত্রের নাম সাকিব আল হাসান। তবে বিতর্ক থাকলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের পোস্টার বয় যে সাকিব সে সম্পর্কে কারো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বেশ কিছু বড় রেকর্ড রয়েছে তার দখলে। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্টেও বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন এক রেকর্ড গড়েছেন টাইগারদের সাবেক এই অধ্নায়ক। অথচ মাঠে ও মাঠের বাইরে গত কিছু দিন থেকেই বেশ চাপে আছেন টাইগার অলরাউন্ডার।

গত মাসে দেশে না থাকলেও রাজনৈতিক পরিচিতির সুবাদে সাকিবের বিরুদ্ধে হয়েছে হত্যা মামলাও। গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আদাবরের রিংরোডে প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন গার্মেন্টসকর্মী রুবেল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট একটি হাসাপাতালে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ২২ আগস্ট ডিএমপির আদাবর থানায় খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে সাকিবসহ আরও ৪০০-৫০০ জনের নামে মামলা করেন রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম। অভিযুক্ত হওয়ায় সাকিবকে জাতীয় দল থেকে বাদ দিতে বিসিবিকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ আলম। 

হত্যা মামলা এবং দল থেকে বাদ দেয়ার আইনি নোটিশের পর সাকিব দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। একই সঙ্গে তাকে বিসিবি আর দলে রাখবে কি না তা নিয়েও সমর্থকদের মাঝে আছে আগ্রহ। এদিকে কঠিন সময়ে চাপ সামলেও ঠিকই সেরা পারফর্ম্যান্স করেছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি, হয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সবথেকে বেশি উইকেটের মালিক। 

এদিকে হত্যা মামলার আসামী সাকিব কঠিন সময়ে পাশে পাচ্ছেন নিজের সতীর্থদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাকিবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা। সাবেক এই অধিনায়ককে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে বাংলাদেশের জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন মুশফিকুর রহিম। দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনি। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে সাকিবকে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। গতকাল দেয়া পোস্টে মুশফিক লিখেন, ‘সাকিবকে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সর্বাধিক উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়ার জন্য অভিনন্দন। আমি অনেকবার বলেছি এবং আবার বলছি যে সাকিবের মতো একজন চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে খেলতে পেরে আমি গর্বিত। একজন টিমমেট এবং ভাই হিসেবে, আমি সাকিবের কঠিন সময়গুলোর সঙ্গী এবং আমি তার বিরুদ্ধে তোলা মিথ্যা অভিযোগের সমর্থন করি না। কারণ, আমি জানি সে কখনোই অমানবিক কাজে লিপ্ত হবে না। আমরা সব সময় তোমার পাশে আছি, বন্ধু।’

সাকিব দীর্ঘ সময় ধরে আছেন দেশের বাইরে। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে খেলার পর তিনি খেলেছেন কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টিতে। আন্দোলনের পুরো সময়টাতেই তিনি দেশে ছিলেন না। তাই তাঁর নামে মামলা অপ্রত্যাশিত বলে জানিয়েছেন জাতীয় দলের আরেক তারকা ক্রিকেটার মমিনুল হক। তিনি ফেসবুকে লিখেন, ‘গার্মেন্টসকর্মী হত্যা মামলার দায়ে অভিযুক্ত সাকিব ভাই তখন কানাডায় খেলছিলেন। দেশেও ছিলেন না লম্বা সময়। সাকিব ভাইয়ের নামে এমন মামলা অপ্রত্যাশিত। এমন ঘটনা দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে।’

এর আগে এনামুল হক বিজয়, রুবেল হোসেনরাও সাকিবের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। কঠিন সময়ে সাবেক অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেটারদের সংগঠন ‘ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ও। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে কোয়াব সাকিবের প্রতি নিজেদের সমর্থন জানিয়েছে। 

সাকিবের পাশে দাঁড়িয়েছে কোয়াব জানিয়েছে, ‘সম্প্রতি দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে আসামি করা হয়েছে মর্মে জানতে পেরেছে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- কোয়াব। সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটারদের কল্যাণে গঠিত সংগঠন কোয়াব সাকিব আল হাসানের প্রতি খেলোয়াড় বিবেচনায় সহানুভূতি প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।’ 

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের গুরুত্ব অনেক জানিয়ে কোয়াব আরও বলেছে, ‘সাকিব আল হাসানের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা থাকতে পারে। কারোর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের প্রেক্ষিতে দায়েরকৃত কোনো মামলার বিষয়ে কোয়াবের বক্তব্য নেই। কোয়াব মনে করে, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।’