পানির সন্ধানে চাঁদে এবার খনন যন্ত্র পাঠাচ্ছে ইউরোপ

পানির সন্ধানে চাঁদে এবার খনন যন্ত্র পাঠাচ্ছে ইউরোপ

ছবিঃ সংগৃহিত।

চাঁদ কি আবার মানুষকে আপন মহিমায় কাছে টানছে? সাম্প্রতিক চাঁদে অভিযান যেন সবারই আগ্রহের লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। দিন দিন এমন আশাও বাস্তব রূপ পাচ্ছে যে, ভবিষ্যতে মানব অভিযাত্রীরা সম্ভবত চাঁদের স্থায়ী ঘাঁটিতে থাকবেন।

এই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেওয়ার পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পানি।

বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকাশনা নোরিজ লিখেছে, এই পানির খোঁজ পেতেই চাঁদে ড্রিল মেশিন পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইএসএ। সংস্থাটি এক ঘোষণায় ২০২৭ সালে নিজেদের ‘প্রসপেক্ট’ প্যাকেজের মাধ্যমে চাঁদে যাত্রার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

‘প্রসপেক্ট’ প্যাকেজটিকে তৈরি করা হয়েছে ড্রিল ও ক্ষুদ্র পরীক্ষাগার নিয়ে, যা চাঁদের পানি ও অন্যান্য উদ্বায়ী উপাদান অনুসন্ধানের জন্য কাজ করবে। এ প্রকল্পটি চাঁদে মানুষের অনুসন্ধানের পথকে আরও প্রশস্ত করবে বলে দাবি সংস্থাটির।

চাঁদে পানির থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র ‘লুনার ক্রেটার অবজারভেশন অ্যান্ড সেন্সিং স্যাটেলাইট’।

এতে ইঙ্গিত মিলেছে প্রাথমিকভাবে চাঁদের মেরু অঞ্চলের স্থায়ীভাবে ছায়াযুক্ত বিভিন্ন গর্তে বরফ আকারে রয়েছে পানি, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল। কারণ, এর মানে – ভবিষ্যতে মানব অভিযাত্রীরা চাঁদে পানি সংগ্রহ করে তা পান করার জন্য ও অক্সিজেন, এমনকি রকেটের জ্বালানীর জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।

তবে চাঁদের মেরু অঞ্চলের বিভিন্ন গর্তে প্রবেশ করার বিষয়টি বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ এ অঞ্চলের পরিবেশ তুলনামূলক রুক্ষ ও প্রতিকূল।

২০২৭ সালে চাঁদে যাত্রা করবে নাসা’র ‘কর্মাশিয়াল লুনার পেলোড সার্ভিস’, সঙ্গে নিয়ে যাবে ‘প্রসপেক্ট’ প্রোব, যেখানে থাকবে ‘প্রোডসিড’ নামের একটি ড্রিল ও ‘প্রোএসপিএ’ নামের ক্ষুদ্র পরীক্ষাগার।

প্রসপেক্টের এই ড্রিল যন্ত্রটি এক মিটার গভীরতায় চাঁদের পৃষ্ঠে অর্থাৎ ‘রেগোলিথ’-এ ড্রিল করবে। এ গভীরতায় তাপমাত্রা মাইনাস ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়েও কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই এখানে পানি থাকলে সেটি বরফ আকারে থাকবে।

সেই গভীরতায় নমুনা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের জন্য পরীক্ষাগারে (প্রোএসপিএ) পাঠানো হবে। নিজস্ব বিশ্লেষণে কাজ করতে সক্ষম ‘প্রোএসপিএ’। কারণ এতে একটি ‘মাল্টিস্পেকট্রাল ইমেজার’ ও একটি ‘পারমিটিভিটি সেন্সর’ আছে, যা চাঁদের উপাদানের চার্জ ধারণক্ষমতা পরিমাপ করতে ও উদ্বায়ী পদার্থ এবং অবতরণ স্থানের খনিজের গঠন শনাক্ত করতে সহায়তা করবে।

প্রাপ্ত উপাদানটিকে একবার প্রোএসপিএ’তে পাঠানো গেলে তা বিভিন্ন নমুনাকে একাধিক ওভেনসহ ক্যারোসেলের মতো অনেক বিভাগে রাখবে। পাশাপাশি ঠাণ্ডায় আটকে থাকা বিভিন্ন উদ্বায়ী উপাদান বের করার জন্য সেগুলোকে বদ্ধ অবস্থায় উত্তপ্ত করা হবে।

এসব নমুনা উত্তপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্গত নানা গ্যাস থেকে উদ্বায়ী পদার্থের প্রকৃতি ও ঘনত্ব পরিমাপ করবে প্রোএসপিএ। ভবিষ্যতের বিভিন্ন মিশনের জন্য উদ্বায়ী নিষ্কাশনের নানা প্রক্রিয়াও খতিয়ে দেখবে এটি।

এরইমধ্যে চাঁদের পৃষ্ঠের মতো কম তাপমাত্রা ও নিম্ন চাপের পরিবেশে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে প্রোডসিড। একইসঙ্গে নমুনা বের করার জন্য শক্ত উপাদানে ড্রিল করতেও এটি সক্ষম হয়েছে।

একটি সফল মিশন কেবল ভবিষ্যতের জন্য মানব অনুসন্ধানের ভিত্তিই স্থাপন করবে না, বরং চাঁদের পরিবেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেতে আমাদের সহায়তাও করবে - উল্লেখ করেছে নোরিজ।