তাহলে বিশ্বের বহু দেশেই কি ভেবে নিয়েছেন "রোহিঙ্গারা " বাংলাদেশি

তাহলে বিশ্বের বহু দেশেই কি ভেবে নিয়েছেন "রোহিঙ্গারা " বাংলাদেশি

আবু জাফর

আবু জাফর-

বাংলাদেশে আসা নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা আজ ১১ লাখের চেয়েও বেশি। বাংলাদেশ প্রথম থেকেই নমনীয় নীতির ফল ভোগ করছে এখন।  রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নানা অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ছে। তাদেরকে তাদের দেশে পাঠানো কোন রাস্তাই দেখছেনা বাংলাদেশ। এর ভিতরেই মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে সৌদি থাকা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী বেশ কিছু রোহিঙ্গা। সৌদি সরকার বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে চাপ দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় তোলার পর সম্প্রতি বাংলাদেশকে একাধিক চিঠি দিয়ে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছে সৌদি আরব। তাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। আবার কেউ কেউ সৌদি আরবের বাংলাদেশ মিশন থেকে পাসপোর্ট নিয়েছেন কিংবা নবায়ন করেছেন।

 
১৯৭০ এর দশক থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও চলাচলের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত। গত বছরে আইসিজেতে এ নিয়ে মামলা দায়ের করেছিলো পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। গাম্বিয়া (ওআইসি) পক্ষে এই আইনি প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নেয়। কুয়ালালামপুরে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির রাজনীতির অধ্যাপক ইশতিয়াক হোসেন মনে করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর ওআইসি তেমন কোনও চাপ তৈরি করতে পারবে না। "কারণ প্রথমত মিয়ানমার ওআইসির সদস্য নয়। তাছাড়া ওআইসির সনদ অনুযায়ী কোন সময় একজন আরেকজনের ব্যাপারে নাক গলাতে পারবেনা"। তবে এ বিচার কার্যে  উঠে আসে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষকে আগুনে নিক্ষেপ এবং ১ লাখ ১৪ হাজারের বেশি মানুষকে পেটানো নির্মম গণহত্যার কথা। এমনকি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ১৭ হাজার ৭১৮ রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে ধর্ষণ করেছে। জাতিসংঘ এটিকে জাতিগত নিধনের উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কার্যক্রম ও অর্থায়ন অনেক কমে আসছে বলে জানা গেছে। সরকার ভাসানচর এলাকায় প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার অস্থায়ী আবাসনের যে পরিকল্পনা নিয়েছিল, তা কার্যকর হবে বলে মনে হয় না। কারণ,  আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, বিশেষ করে জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশন অনিচ্ছার বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার সরকারি পরিকল্পনার সঙ্গে সহমত নয়। রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার অঞ্চলে অনিশ্চিত কালের অবস্থান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তসীমান্ত নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। 
ইতিপূর্বে যখনই  মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সমস্যা হয়েছিল তখনই চীনকে দূতিয়ালির ভুমিকায় আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু বর্তমানের অবস্থাটা অন্য, চীনের রপ্তানি বানিজ্যের অন্যতম পথ মালাক্কা প্রণালী।  যুক্তরাষ্ট্র এই প্রণালীটি অবরুদ্ধ করে দেয়ার সম্ভাবনা অমূলক নয় তাই চীন মালাক্কা প্রণালী ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের আরেকটি পথ খোলা রাখতে চায়, সে জন্যই মিয়ানমারের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক রাখছে। চীনের পররাষ্ট্র নীতি হলো যে কোন রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সংহতি কে প্রাধান্য দেয়া । এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ইস্যুতে  মিয়ানমার প্রথমেই তাদের রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা ও নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন তাই চীন রোহিঙ্গাদেরকে সন্ত্রাসী বলেই চেনেন। তাছারা চীনের নিজস্ব রাষ্ট্রকাঠামোর উইঘুরের  সাথে রোহিঙ্গা ইস্যু সংগতিপূর্ণ। 

এখন চীন বা রাশিয়া আমাদের পক্ষে না থাকলেও তারা যে অন্য পক্ষে আছে তাও তারা বলে নি। তারা জাতিসংঘে ভোট দেয় নি, বরং বিরত থেকেছে। 

যখন নিরাপত্তা পরিষদে প্রেসিডেন্সিয়াল স্টেটমেন্ট এসেছে - তখন কিন্তু চীন বা রাশিয়া সেটার বিরোধিতা করে নি।" তাই আমাদের কূটনীতির এখানে একটা এক্সপ্লোরেশনের জায়গা আছে। বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে সাবেক কূটনীতিবিদ হুমায়ুন কবির বলেন "চীন যদি বাংলাদেশের পক্ষে নাও থাকে, অন্তত বিপক্ষে যেন না থাকে এবং একটা নিরপেক্ষ অবস্থানে যদি তাকে রাখা যায় - সেটাও বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য একটা ইতিবাচক ব্যাপার হবে" 

গত কয়েকদিন পূর্বে গুগুলের মানচিত্র থেকে ফিলিস্তান রাষ্ট্রের সীমানা মুছে দেওয়া হয়। অথচ ঐ ভূখণ্ডের মূল মালিক এই ফিলিস্তিনিরাই। আমরা বাংলাদেশী, বহু প্রাণে বিনিময়ে আমরা জায়গা করে নিয়েছি বিশ্ব মানচিত্রে। আমাদের ইতিহাস আছে ঐতিহ্য আছে কিন্তু আমাদের অভাব হল শিখার মধ্যে। রাষ্ট্রকে সবার ওপর স্থান দেয়াই হল চীন- রাশিয়া,  ভারত  বা সিঙ্গাপুরের মত দেশগুলোর পররাষ্ট্র নীতি তাই তারা সহজেই অত মানবিকতার পরিচয় দেয় না। বাংলাদেশ লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাদের শুধুমাত্র মানবিক বিবেচনায় ছোট্ট ভূমিতে জায়গা দেয়াটা আদৌও ঠিক হয়েছে কিনা সময়ই বলে দিচ্ছে সে কথা! সব কিছু মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে বহু দেশ হয়ত ভেবেই নিচ্ছে এরা বাংলাদেশি নতুবা সুযোগ নিচ্ছে বাংলাদেশ নমনীয় পররাষ্ট্র নীতিতে।

লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।