যেভাবে প্রতিরোধ করবেন স্ট্রোক

যেভাবে প্রতিরোধ করবেন স্ট্রোক

ফাইল ছবি

স্ট্রোক একটি ঘাতক ব্যাধি। প্রতিবছর প্রায় দেড় কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় অর্ধকোটি আর অর্ধকোটি পঙ্গুত্ব বরণ করে। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ এটি।

মারা যাওয়া মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ আমাদের মতো দেশে ঘটে। দিন দিন স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই হার প্রায় ৮০ গুণ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশেও এই হার কম নয়।

মারা যাওয়া মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ আমাদের মতো দেশে ঘটে। দিন দিন স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এই হার প্রায় ৮০ গুণ বেড়ে যাবে। বাংলাদেশেও এই হার কম নয়।

দেশে প্রতি হাজারে প্রায় ১২ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। ঘাতক এই ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়

৯০ শতাংশ স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়। মূল কারণগুলো প্রতিরোধ করতে পারলে স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায়।

ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন : গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়।

ধূমপানের ফলে রক্তনালিতে চর্বি জমা হয়ে রক্তনালি বন্ধ করে দেয়। ফলে মস্তিষ্কে পরিমিত রক্ত পৌঁছতে পারে না। সিগারেটের নিকোটিন রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, রক্তে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়িয়ে অক্সিজেনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং রক্তের ঘনত্ব বাড়িয়ে রক্তপিণ্ড তৈরিতে ভূমিকা পালন করে। যেকোনো বয়সেই ধূমপান ত্যাগ করা হোক না কেন, তা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

নিয়ন্ত্রণ করুন উচ্চ রক্তচাপ : রক্তচাপ স্বাভাবিকের মধ্যে রাখুন। এ জন্য অতিরিক্ত লবণ পরিহার করুন, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন।

হার্টের রোগের চিকিৎসা নিন : হার্ট অ্যাটাক, অনিয়ন্ত্রিত      হৃদস্পন্দন, হার্ট বড় হয়ে যাওয়া, ভালেভর সমস্যা ইত্যাদি কারণে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এ রোগগুলোর চিকিৎসা করুন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন : ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রোকের সময় রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকলে মস্তিষ্কে কোষ বেশি পরিমাণে ধ্বংস হয়। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের কারণে রক্তনালিতে চর্বি জমে যায়। ফলে রক্তনালি সরু হয়ে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।

পুষ্টিকর খাবার খান : প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান। প্রতিদিনের খাবারে পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফলমূল ও শাকসবজি রাখুন। রেড মিট, যেমন—গরু, ছাগল, ভেড়ার মাংস খাবেন না। চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। এতে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যেটা ধমনিতে চর্বির আস্তরণ পড়তে সহায়তা করে। লবণ রক্তচাপ বাড়ায়। লবণ খাবেন না। আঁশযুক্ত খাবার বেশি বেশি খান। কমিয়ে ফেলুন শরীরের অতিরিক্ত ওজন। অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। এতে শরীরে মেদ জমবে। খাবার খান শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে তাল রেখে। পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেমন—সবুজ শাকসবজি, সয়াবিন তেল, মাছের যকৃৎ খান।

ব্যায়াম করুন : গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যায়াম করে তাদের রক্তচাপ, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। হাঁটা ভালো ব্যায়াম। হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় মেনে হাঁটুন। সপ্তাহে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচ মাইল হাঁটুন। এ ছাড়া সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, নাচা, টেনিস বা গলফ খেলতে পারেন। ব্যায়ামের সময় বুকে ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা বা শ্বাসকষ্ট হলে ব্যায়াম বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

মানসিক চাপ কমান : রাগ কমান, কমিয়ে ফেলুন মানসিক চাপ। জোর করে হলেও হাসুন প্রাণ খুলে। মেডিটেশন করতে পারেন। এত কমবে মানসিক চাপ, বাড়বে আত্মবিশ্বাস।

রক্তে কোলেস্টেরল কমিয়ে ফেলুন : রক্তে কোলেস্টেরল বেশি হলে রক্তনালিতে চর্বি জমে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়। নিয়ন্ত্রণে রাখুন কোলেস্টেরলের মাত্রা। তাই স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন—গরু বা খাসি বা পাতিহাঁস, শূকরের মাংস, চিজ, বিভিন্ন ধরনের কেক, আইসক্রিম, ইয়োগার্ট, কনডেন্সড মিল্ক ও কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার, যেমন—ডিমের কুসুম, চুপড়ি আলু, বিভিন্ন প্রাণীর মস্তিষ্ক ও যকৃৎ, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। যদি রক্তে কোলেস্টেরল না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল  : পিল রক্তকে ঘন ও জমাট বাঁধিয়ে ফেলতে পারে। সেই সঙ্গে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। পিল সেবনের আগে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক

ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস (নিনস), ঢাকা