কক্সবাজারে ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি

কক্সবাজারে ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি

কক্সবাজারে ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা তিন দিনের বর্ষণজনিত পাহাড়ি ঢল ও সামুদ্রিক জোয়ারে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চলের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন পাঁচ লাখের বেশি মানুষ। পাহাড়ি ঢলে বিধ্বস্ত হয়েছে অন্তত ২০০ ঘরবাড়ি।কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সোমবার রাত থেকে কক্সবাজার জেলায় টানা বর্ষণ চলছে। এতে জেলার নয়টি উপজেলাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ঈদগাঁও, উখিয়া, টেকনাফ ও মহেশখালীতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, কক্সবাজার পৌরসভার নিম্নাঞ্চল সমিতিপাড়া, পেশকার পাড়া ও আলীর জাহালের কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া খুরুশকুল, পিএমখালি, মাছুয়ারঘোনা পাহাড়ি ঢলে তালিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও নদীর পানি প্রবেশ করে ঈদগাঁওয়ের জালালাবাদ, ঈদগাঁও, পোকখালীর বেশিরভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাড়িঘর ও গ্রামীণ রাস্তাঘাট পাঁচ থেকে ছয় ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকায় স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসরত লোকজন নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করছে।

এ দিকে তিন দিনের টানা বর্ষণে জেলার মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদী ও ছোট-বড় কয়েকটি খাল-ছড়া দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উখিয়ার কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এইকইসাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রামুর কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, সদরের ঈদগাঁও, পোকখালী, ইসলামাবাদ, টেকনাফের হোয়াইক্যং, বাহারছড়া ইউনিয়ন, চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, ডুলাহাজারা, চিরিঙ্গা ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। এসব গ্রামের কয়েক হাজার বাড়ি অন্তত পাঁচ ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে।অপর দিকে সামুদ্রিক জোয়ারের পানি উপকূলীয় এলাকায় কয়েক ফুট উচ্চতায় আঘাত হানছে। এতে সাগরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সৈকতের ঝাউবাগান।

এ বিষয়ে পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, ইউনিয়নের নাছির মৌলভীর বাড়িসংলগ্ন বেড়িবাঁধের ২০০ ফুটের মতো এলাকা ভেঙে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ঈদগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম জানান, ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে ঈদগাঁওর সাথে ঈদগড়ের সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে।এদিকে উখিয়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পালংখালী ইউনিয়নের মানুষ।

এ বিষয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, টানা বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে উখিয়ার জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং, রত্নাপালং, রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। তিনি বলেন, পালংখালী ইউনিয়নের প্রায় সব বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাহাড় ধসে ১৩টি বাড়ি ভেঙে গেছে। জালিয়াপালং, রত্নাপালং ও রাজাপালংয়ের নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হওয়ায় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিস ও স্থাপনায় পানি ডুকে গেছে।মহেশখালীতে প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্তহয়েছে। ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে পুরো বাজারের শতাধিক দোকান। রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুর রহমান বলেন, উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হোয়ানক ইউনিয়নের কালাগাজির পাড়া ও হরিয়ার ছড়া গ্রাম। দু’টি গ্রামেই শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারি সহায়তার জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

রামু উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ফতেখাঁরকুল, রাজারকুল, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

ভারী বর্ষণে টেকনাফ পৌরসভাসহ হ্নীলারি রঙ্গিখালী জেলেপাড়া, মৌলভীবাজার হোয়াইক্যংয়ে উলুবনিয়া, উনচিপ্রাং নয়াবাজার ও খারাংখালীর বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একইসাথে আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: পারভেজ চৌধুরী।কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামীজানান, টানা বর্ষণে বেশ কয়েকটি এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে জেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া দফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো: আব্দুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের কারণে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার উপকূলে চলাচল করা নৌযানগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদে থেকে মাছ শিকারের কথা বলা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরো দু’দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত
অব্যাহত থাকতে পারে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। পাহাড়ে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে। প্লাবিত এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।মহেশখালি-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, মহেশখালির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত সহযোগিতা দেয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, উখিয়ার প্লাবিত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। সেখানে তাদের রাতের খাবারসহ শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ইউএনওদের নিদের্শনা দিয়েছি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার করার জন্য।