দ্রুতই কাবুলে তালেবান সরকারে স্বীকৃতি দিচ্ছে দিল্লি!

দ্রুতই কাবুলে তালেবান সরকারে স্বীকৃতি দিচ্ছে দিল্লি!

ছবি : সংগৃহীত

আফগানিস্তানে রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবান। রোববার তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির রাজধানী কাবুল দখল করে। এখন নতুন সরকার গড়ার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী দু’দিনের মধ্যে সরকার গঠনের কার্যক্রম শেষ হবে বলে জানিয়েছে তালেবান। প্রতিবেশী দেশ কাতারের রাজধানী দোহায় চলছে এ নিয়ে তৎপরতা। তালেবান নেতারা আপাতত আলোচনার টেবিলে। দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিনিধির সাথে চলছে তাদের কথাবার্তা।

ভারত কি তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেবে? দিলেও ভারতের কূটনীতির প্রশ্নে নতুন তালেবান সরকার কতদূর সফল হবে? এমন সব বিতর্ক চলছে ভারতজুড়ে।

দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভারতের প্রতিবেশী বলয়ে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশ ইতোমধ্যেই আসন্ন তালেবান সরকারের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে রেখেছে। নয় তো সম্পর্ক তৈরিতে উদগ্রীব। এই বিষয়টি কিভাবে দেখছে ভারত কর্তৃপক্ষ? ভারতও কি ইতোমধ্যেই তালেবানের সাথে গোপনে কথাবার্তা শুরু করেছে?

এসব প্রশ্নে দেশটির সচিবালয় সূত্র বলছে, ‘তালেবান সরকারের সাথে ভারতের সম্পর্ক কী হবে, তা বলার মতো সময় এখনো আসেনি। আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। অন্যান্য দেশ কিভাবে চলে সেটাও দেখছি। কিন্তু প্রতিটি দেশের অবস্থান, সমস্যা ও কূটনৈতিক শর্ত পৃথক। তালেবানকে নিয়ে আমাদের ইস্যু জাতীয় নিরাপত্তার সাথে যুক্ত। ফলে আমাদের গভীরভাবে সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

কোন দিকে চলছে এই ‘ভাবনার’ গতি? ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বক্তব্য, আফগানিস্তানে আটকে পড়া ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনতে দর কষাকষি শুরু হওয়া মাত্রই কথাবার্তা শুরু হয়েছে তালেবান নেতৃত্বের সাথে। এটাও জানা গেছে, তালেবানের সরকার গড়া নিয়ে নয়াদিল্লির সাথে কোনো আলোচনা না-হলেও সূত্র মাধ্যমে ভারত তাদের দাবিগুলো বিভিন্ন মাধ্যমে জানিয়েছে তালেবান নেতাদের কাছে। ভারত চায়, ৯৬ সালে মোল্লা ওমরের মতো সরকার যেন না হয়। আফগানিস্তানের সমস্ত সম্প্রদায়ের (তাজিক, উজবেক, হাজারা ইত্যাদি) প্রতিনিধিত্ব যেন থাকে সরকারে।

নয়াদিল্লি মনে করছে, এক্ষেত্রে সামান্য হলেও ভবিষ্যতে দর কষাকষির পরিসর থাকবে ভারতের। কূটনৈতিক সূত্রের দাবি, বিগত দু’দশক ধরে আফগানিস্তানে ভারত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য যে সামাজিক ও পরিকাঠামো প্রকল্প তৈরি করেছে, এর ফলে সার্বিকভাবে ভারত সম্পর্কে একটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি এটাও চাওয়া হচ্ছে যে আগের কট্টরপন্থী অবস্থান থেকে তালেবান সরকারকে কিছুটা আধুনিক ও নমনীয় হতে হবে। নারী-অধিকার, মানবাধিকার ও সংবাদমাধ্যম-সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে ১৯৯৬-এর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, এ কথা জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকেও বলেছে নয়াদিল্লি।

তালেবান সরকার গঠন নিয়ে যাদের সাথে আলোচনা চালাচ্ছে, তাদের মধ্যে দু’জন ভারতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। একজন দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, অন্যজন শান্তি আলোচনার অন্যতম আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ। তাদের মাধ্যমেই ভারত নিজেদের বার্তা পাঠিয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বুধবার কারজাইয়ের সাথে দোহায় তালেবান নেতাদের দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।

তবে এ কথা দিল্লি জানে, তাদের ইচ্ছানুসারে একটি পাতাও নড়বে না আফগানিস্তানে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, আসন্ন আফগান সরকার সম্পর্কে কী অবস্থান নেয়া হবে? সূত্রের বক্তব্য, পাকিস্তানের সাথে যে রকম মাঝামাঝি কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখা হয়েছে, তেমনিভাবে চলা হতে পারে তালেবান সরকারের সাথে। সরকারকে একেবারে অস্বীকার করা হবে না, নিয়মমাফিক ভারতীয় দূতাবাসও থাকবে। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক বিনিময় হবে শর্তসাপেক্ষ ও সীমিত ক্ষেত্রে।

অশ্য গত মাসেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মস্কোয় গিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে সামরিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে তালেবানের ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দেয়া যায় না। কিন্তু ভারতের কথা যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া, তা নয়াদিল্লির কাছে চিন্তার।

অন্য দিকে তালেবান যদি যুক্তরাষ্ট্রে হামলা না করার ব্যাপারে কথা দেয়, তাহলে উপমহাদেশ নিয়ে কোনো মাথাব্যথাই থাকবে না বাইডেন প্রশাসনের। সম্প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে আফগান-নীতি নিয়ে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। তিনি কোয়াড বা চতুর্দেশীয় সংস্থার কথা তুলে বলেছেন, ‘ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ পূর্বে মিলে যায়। কিন্তু পশ্চিমে মতবিরোধ রয়েছে।’ অর্থাৎ তার বক্তব্য, পূর্ব এশিয়া বা চীন-সংক্রান্ত নীতির প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র পাশে থাকলেও পশ্চিম এশিয়া অর্থাৎ কাবুল প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র আর নেই
ভারতের সাথে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা