সৎ পথে পরিশ্রমই রিজিক বৃদ্ধির মূলতন্ত্র

সৎ পথে পরিশ্রমই রিজিক বৃদ্ধির মূলতন্ত্র

সৎ পথে পরিশ্রমই রিজিক বৃদ্ধির মূলতন্ত্র

আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক প্রাণীর রিজিকের জিম্মাদার। তবুও মানুষ এ রিজিকের পেছনেই সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করে। এ রিজিকের জন্য আল্লাহর হক ভুলে যায়। আল্লাহর ইবাদত ভুলে যায়। যত ধরনের অপরাধ আছে তা করতে দ্বিধাবোধ করে না, অধৈর্য হয়ে এ রিজিকের জন্য সব ধরনের হারাম পন্থা অবলম্বন করতে পিছপা হয় না। দারিদ্র্যকে মানুষ যেভাবে ভয় পায়, টাকা পয়সা হাতছাড়া হয়ে যাবে, গরিব হয়ে যাবে এ ভয় মানুষকে যেভাবে আতঙ্কিত করে তার হাজার ভাগের এক ভাগও যদি মানুষ আল্লাহকে ভয় পেত তাহলে একেকজন আল্লাহর ওলি হয়ে যেত।

আর রিজিক বাড়ে এমন আমলের মধ্যে আরেকটি হচ্ছে, অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার পড়া এবং তা নিয়মিত করা। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী নুহ আ:-এর কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা করো।

তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।’ (সূরা নুহ : ১০-১২) অন্য দিকে হুদ আ:-এর কথা বলতে গিয়ে ইরশাদ করেন, ‘আর হে আমার কওম! তোমাদের পালনকর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তারই প্রতি মনোনিবেশ করো; তিনি আসমান থেকে তোমাদের ওপর বৃষ্টিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির ওপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মতো বিমুখ হইও না।’ (সূরা হুদ-৫২) হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার পড়বে আল্লাহ তায়ালা তাকে সব দুশ্চিন্তা ও সঙ্কটাপন্ন অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেবেন এবং ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন।’ (আবু দাউদ)

কুরতুবি রহ. বলেন, ‘এতে বোঝা যায়, ইস্তিগফারে রিজিক বাড়ে এবং বৃষ্টি বর্ষিত হয়।’ জীবিকার প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার ওপর যথাযথ ভরসা করা। হৃদয় মাওলার সাথে যুক্ত থাকবে। সব ক্ষেত্রে তাঁর কাছেই সমর্পণ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করবে, সে তার সব প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট এবং তার সব অকল্যাণ ও ক্ষতিকর বিষয় তিনি প্রতিহত করবেন এবং ধারণাতীতভাবে তাকে জীবিকা দান করবেন। হাদিসে এসেছে, ‘যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালার ওপর সঠিক ও যথাযথভাবে ভরসা করো, তাহলে তিনি তোমাদের পাখির মতো জীবিকা দান করবেন, ক্ষুধার্ত অবস্থায় সবাই বের হয় আর পেটপূর্তি করে বিকেলে বাসায় ফিরে।’

(আহমাদ, তিরমিজি) ইবনে রজব রহ. বলেন, ‘তাওয়াক্কুল ও ভরসার ক্ষেত্রে হাদিসটি মূলনীতি হিসেবে গৃহীত। আর তাওয়াক্কুল ও ভরসা জীবিকার বিভিন্ন আমল ও মাধ্যমের অন্যতম।’ আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে সুগম করেছেন, অতএব তোমরা তার কাঁধে বিচরণ করো এবং তার দেয়া রিজিক আহার করো।’ (সূরা মুলক-১৫) ‘কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে।’ (সূরা মুজ্জাম্মিল-২০) ওমর রা: বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন জীবিকার সন্ধান না করে বসে বসে এ কথা না বলে, হে আল্লাহ আমাকে রিজিক দাও, কারণ তোমরা জানো আকাশ কখনো স্বর্ণ-রুপা বর্ষণ করে না।’

বরকতময় জীবিকা পাওয়ার আরেকটি অন্যতম সূত্র হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। হাদিসে এসেছে, ‘যার জীবিকার প্রসারতা ও জীবনের ব্যাপ্তি তাকে আনন্দিত করে, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বোখারি) আল্লাহ তায়ালার হেকমত ও অনুগ্রহের মধ্যে এটি একটি যে, তিনি দান-সদকা ও আল্লাহর পথে খরচ করার মধ্যেও অফুরন্ত জীবিকার ব্যবস্থা রেখেছেন। তাই যে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবে তিনি তার বিপরীতে তাকে দান করেন এবং তার কাছে যা আছে তাতে বরকত দান করেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যা কিছু ব্যয় করো, তিনি তার বিনিময় দেন। তিনি উত্তম রিজিকদাতা।’ (সূরা সাবা-৩৯)

আর রিজিক বৃদ্ধির শ্রেষ্ঠ আমল আল খাছায়েছুল কুবরা নামক কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ডের ২৯৯ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে। এক সাহাবির মাধ্যমে আমরা বিশ্বনবীর নবুয়তি জবান থেকে এ দোয়াটি পাই। যে দোয়াটির আমল করলে আপনার কাছে এত বেশি রিজিক আসবে কোথায় রাখবেন দিশা পাবেন না। হাদিসটি বলার আগে কিছু কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন বড়ই আফসোসের বিষয় হলো, রিজিকের জন্য বর্তমান যুগে যত বেশি মানুষ রাত-দিন পেরেশানিতে আছে বিগত কোনো যুগে এমনটি ছিল না।
এবার আসুন হাদিসটি শুনি এবং দোয়াটি মুখস্থ করে ফেলি। একজন সাহাবি আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা: দুনিয়া আমার প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছে। ইরশাদ করলেন, ‘তোমার কি ওই তাসবিহ স্মরণ নেই, যে তাসবিহ ফেরেশতা ও মাখলুকের, যার বরকতে রুজি প্রদান করা হয়।

যখন সুবহে সাদিক উদিত (শুরু) হয় তখন এ তাসবিহ ১০০ বার পাঠ করো ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম আস্তাগফিরুল্লাহ।’ ওই সাহাবি চলে গেলেন। কিছুদিন পর পুনরায় হাজির হয়ে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সা: দুনিয়া আমার কাছে এত বেশি আসছে, আমি হতবাক! কোথায় উঠাব, কোথায় রাখব! (আল খাছায়িছুল কুবরা, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হারাম থেকে বেঁচে ও হালাল পন্থায় উপার্জন করার তৌফিক দিন এবং আয় রোজগারে বরকত দিন। আমিন।