আজ সুন্দরবন দিবস

আজ সুন্দরবন দিবস

ফাইল ছবি

আজ সুন্দরবন দিবস। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষায় খুলনাসহ উপকূলীয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দুই দশক ধরে দিনটি উদযাপন হয়ে আসছে।

২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রূপান্তর ও পরশ-এর উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করে প্রতিবছর পালন করা হয়।

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং অনন্যসুন্দর প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবন একাডেমির আয়োজনে খুলনাসহ সুন্দরবনঘনিষ্ঠ জেলাগুলোতে বেসরকারিভাবে সুন্দরবন দিবসের নানাবিধ কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে।

জানা যায়, সুন্দরবন রয়েছে ৫ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছ রয়েছে।

প্রতিনিয়ত বনখেকোদের আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে। সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ গোটা দেশের পরিবেশ।

অতিমারি করোনার কারণে এবারও সীমিতভাবে দিবসটি পালিত হবে। সুন্দরবন একাডেমির উদ্যোগে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও রাজধানী ঢাকার সুন্দরবনপ্রেমীদের অংশগ্রহণে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বেলা ১১টায় ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করবেন সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির। সঞ্চালনা করবেন সুন্দরবন একাডেমির উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম খোকন। এবারের আলোচনার বিষয় ‘সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিকল্প কর্মসংস্থান।’

সুন্দরবন একাডেমির উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম খোকন জানান, সুন্দরবন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ‘খুলনা ঘোষণার’ ১৮ দফা বাস্তবায়নে ২০০১ সাল থেকে প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস পালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘রূপান্তর’ ও ‘পরশ’-এর উদ্যোগে এবং দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে এ দাবি জানানো হয় ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলনে।

ওই সম্মেলনে গৃহীত ১৮ দফার মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন ও বনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে, জাতীর প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষার জন্য বাঘ-হরিণসহ সুন্দরবনের সব ধরনের জীবজন্তু হত্যা বন্ধসহ যাবতীয় বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে, সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের উন্নয়ন প্রকল্পে যে কোনো পদক্ষেপ নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয় জনগণের মতামত নিতে হবে এবং তেল-গ্যাস আবিষ্কারের জন্য অনুসন্ধানী উদ্যোগ বন্ধ করতে হবে।

বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জানান, সুন্দরবনে ৫ হাজার প্রজাতির সম্পূরক উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছ রয়েছে। সুন্দরবনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সমগ্র দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২ কোটি মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থাও সুন্দরবনের উপর কম-বেশি নির্ভরশীল।

তিনি জানান, সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকার বেশ কিছু প্রকল্প ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সবশেষ সুন্দরবনের ৫১ শতাংশ এলাকা সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারের উদ্যোগের ফলে বর্তমানে সুন্দরবনের দস্যুতা দমন হয়েছে।

সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবন একাডেমির আয়োজনে খুলনাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন জেলাগুলোয় বেসরকারিভাবে সুন্দরবন দিবস পালিত হয়ে আসছে। দেশের সামগ্রিক পরিবেশসহ উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ এবং মানুষের জীবিকা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবনের অসাধারণ ভূমিকা প্রশ্নাতীত।

সুন্দরবনের প্রতি মমত্ববোধের জায়গা থেকে সুন্দরবন দিবস পালন করা হচ্ছে। এ দিবসটি সরকারিভাবে পালনের জন্য বিভিন্ন সময়ে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দাবী জানিয়ে আসছে সুন্দরবন একাডেমিসহ পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠনগুলো।