মডার্ন গল্প

মডার্ন গল্প

ফাইল ছবি

তারপর কেটে গেল দীর্ঘ সময়। রানীর সে বিশাল অসুখ__ খুশি হতে পারে না কিছুতেই। রাজার মনেও শান্তি নেই। বারবার রানিকে প্রশ্ন করেন, "তুমি কিসে খুশি হবে?"

রানি বলল_ "কি দিয়েছেন আমাকে?"

রাজা_ "আমার যা কিছু আছে সবই তো তোমার, আর কি চাই?"

রানি_ "আমার চাঁদ চাই, পারবেন দিতে?"

রাজা_ "তোমার জন্য সব পারি।"

ডেকে পাঠানো হল নীল আর্মষ্ট্রং কে। তিনি চাঁদে গেলেন। রাজ্য জুড়ে হইহই কান্ড। কি সাংঘাতিক ব্যাপার। কথা রাখলেন আর্মষ্ট্রং। নিয়ে এলেন এক টুকরো চাঁদ। গর্বকরে রাজা দিলেন তা রানির হাতে। এবার বুঝি রানির অসুখ সারবে। প্রজারা সব ধন্য ধন্য রব তুলল।

রানি_ "ও মা, এ তো পাথরের টুকরো চাঁদ কোথায়।"

এক নিমেষে রাজার দম্ভ চুরমার। রানির অসুখ আরও বাড়ল। হতাশা রাজ্য জুড়ে। গভীর চিন্তায় রাজা।

রানি একদিন বিকালে ছাদে দাঁড়িয়ে পাখি দেখছিল।

রাজা কাছে যেতেই রানি বলল, "আমি পাখিদের মতো উড়তে চাই, ওই আকাশ থেকে দেখতে চাই আমার রাজ্যটাকে। পারবেন আমার সখ পূরন করতে?"

রাজা তখনই তুলে আনল রাইট ব্রাদার্সদের। রাজ্য জুড়ে চুড়ান্ত চরম ব্যস্ততা। তৈরি হল প্লেন। রাজা ভাবল এবার বুঝি রানিকে খুশি করা যাবে। প্লেন উড়ল আকাশে। অবাক রাজ্য বাসী। রানি ঘুরে দেখল তার রাজ্য পাখির চোখে।রাজা আহ্লাদিত। ফিরে এসে রানিকে জিজ্ঞাসা করলেন, "কেমন দেখলে?"

রানি বল্লেন, "খোলা আকাশের হাওয়া নেই, ডানা মেলে ওড়া নেই। এ কেমন পাখি? এতো আপনার ছাদে বসে নীচের রাজ্য দেখার সমান।"

রাজা বিমর্ষ। হতাশ। রানির অসুখ বেড়ে চলে।

একদিন মাঠের পাশ দিয়ে যেতে যেতে কৃষকদের কাজ করা দেখল রানি।রাজাকে প্রশ্ন করে, "পারবেন এভাবে পরিশ্রম করে আমাকে আমাকে খাওয়াতে।"

রাজার রাজপাট গেল চুকে।পরদিন সকালে চাষির বেশে রাজা নামলো মাঠে। সারাদিন পরিশ্রম করতে লাগল। ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যায় ফিরেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এভাবে চলতে থাকল বেশ কিছু দিন। রানির কথা বলার লোকের অভাব হল। রেগে গিয়ে রাজাকে বলল, "সারাদিন যদি ব্যস্তই থাকবেন তবে কেন আমায় বিয়ে করেছিলেন। আমিও তো একটা মানুষ, আমারও তো কিছু কথা বলার থাকতে পারে। সারাদিন কাজ করবেন আর রাত হলে ঘুমিয়ে পড়বেন। কখন কথা বলব আপনার সাথে?"

রাজা উপলব্ধি করল সত্যই তো, বড় অন্যায় করে ফেলেছেন তিনি। রাজা ঠিক করলেন কাল থেকে রানিকে সময় দেবেন। সবসময় রানির আসেপাশে থাকবেন।

দুদিন এভাবেই কাটল। তৃতীয় দিন রানি রেগেমেগে রাজাকে বললেন, "আপনার কি কোনও কাজ নেই, দিনরাত বউয়ের পিছনে ঘুরঘুর করেন কেন। লজ্জা করে না আপনার।"

রাজা লজ্জায় ক্ষোভে রাজ্য ত্যাগ করলেন। সব ছেড়ে তপস্যায় বসলেন। তাকে জানতেই হবে কিভাবে রানিকে খুশি করা যায়। দীর্ঘ তপস্যার পর ব্রহ্মা দর্শন দিলেন।

রাজা সব খুলে বললেন ব্রহ্মা'কে। ব্রহ্মা নিজেও এ সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়ে- ''মহাদেব ভব'' বর দিয়ে কেটে পড়লেন। বাড়ি ফিরে রাজা দেখলেন রানি তার আত্মার শান্তি কামনায় দক্ষযজ্ঞ করছেন। রাগে ক্ষোভে মহাদেব রূপি রাজা রানিকে কেটে কয়েক শো কোটি টুকরো করে ফেললেন এবং ছড়িয়ে দিলেন পৃথিবীর কোনায় কোনায়। শেষে নিজেও আত্মহত্যা করলেন। রানি মৃত্যুর আগে রাজাকে অভিশাপ দিয়ে বলল- 'আমি মারা যাবার পর তুই পৃথিবীর প্রতিটা ঘরে স্বামী হয়ে জন্ম নিবি।'

তারপর থেকে পৃথিবীর প্রতিটি ঘরে রানির আত্মা ভর করছে স্ত্রী রূপে এবং রাজার প্রতিটি সংস্করন আজও স্বামী রূপে হন্যে হয়ে উত্তর খুঁজে বেড়ায় *"স্ত্রী-রা কিসে খুশি হয়?"*

এ প্রশ্নের উত্তর কোনও বিবাহিত পুরুষের জানা থাকলে জানাবেন প্লিজ।
 

সংগৃহীত