৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে চাঁদে রকেট পাঠাতে প্রস্তুত নাসা

৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে চাঁদে রকেট পাঠাতে প্রস্তুত নাসা

সংগৃহীত

আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা চাঁদে অবতরণের জন্য বিশাল একটি রকেট প্রস্তুত করেছে। আগামী সোমবার ওই রকেটটি উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে।

নাসার কর্মকর্তারা বলছেন, ওই ফ্লাইট কতটা প্রস্তুত আছে তা জানার জন্য গত সোমবার এক পর্যবেক্ষণ পরীক্ষা চালানো হয়। তারা মনে করছেন, এতে মূল প্রযুক্তিগত কোনো ত্রুটি নেই।

এই রকেটের মহাকাশে উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা বা এএসএল একটি ক্যাপসুল বহন করবে। এই ক্যাপসুলের নাম ওরাইঅন। যা চাঁদের চারপাশে পরিভ্রমণ করবে।

তবে এই যাত্রায় কোনো মানুষ থাকবে না কিন্তু পরবর্তী মিশনগুলোতে মহাকাশচারিরা যোগ দেবেন, যদি সবকিছু পরিকল্পনামাফিক চলে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে এই এসএলএসটি উৎক্ষেপণ করা হবে। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৮টা ৩৩ মিনিটে শুরু করে যানটি দু'ঘণ্টার মধ্যে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ত্যাগ করবে।

নাসার এক্সপ্লোরেশন সিস্টেমস ডেভেলপমেন্টের সহযোগী প্রশাসক জিম ফ্রি বলেন, পর্যালোচনা থেকে আমরা কোনো নেতিবাচক ফলাফল পাইনি। এবং এ নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো ভিন্নমতও তৈরি হয়নি।

চাঁদে মানুষ প্রথমবারের মতো পা রাখে অ্যাপোলো-১৭ রকেটে চড়ে। আগামী ডিসেম্বর মাসে ওই ঘটনার ৫০ বছর উৎযাপন করা হবে। তাই নাসার জন্য এই যান উৎক্ষেপণ একটি বড় ঘটনা হতে যাচ্ছে।

নাসা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা তাদের নতুন প্রযুক্তি 'আর্টেমিস প্রোগ্রাম' নিয়ে ফিরে আসছে যার প্রযুক্তি আধুনিক যুগকে সমৃদ্ধশালী করবে।

এই চন্দ্রাভিযানকে নাসা মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার একটা প্রস্তুতি হিসেবে দেখছে। তারা আশা করছে, ২০৩০ সাল নাগাদ বা তার পরপরই তারা মহাকাশচারীদের মঙ্গল গ্রহে পাঠাবে।

দি নাসা ওয়াচ নামে ওয়েবসাইটের সম্পাদক কেথ কাউয়িং বলেছেন, আপনি জানেন এখন পর্যন্ত বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ অন্য আরেকটি গ্রহে কেউ হেঁটে বেড়াচ্ছে এমন দৃশ্য দেখে নি। তাই অনেক অর্থেই এটা তাদের জন্য প্রথমবারের মত চাঁদের বুকে ভ্রমণ হবে।

তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা ভিন্নভাবে করি, সবকিছুই তাৎক্ষণিক। কিন্তু এবার সবকিছুই হবে হাই ডেফিনেশন ... এবং তাতে থাকবে শব্দ। কিন্তু দিন শেষে দেখা যাবে মানুষ ভিন্ন একটা গ্রহে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আশা করছি এবার হয়ত এটা একটা বৈশ্বিক প্রচেষ্টা হবে। এটা এমন হবে না যে দু’দেশ নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে।’

এসএলএস এবং ওরাইঅন তৈরি করা হয়েছে এক দশক ধরে। এই পর্যায়ে পৌঁছাতে প্রতিটির খরচ পড়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। ওরাইঅনকে এর আগে ২০১৪ সালে মাত্র একবারের জন্য পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের কাছাকাছি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। কিন্তু তখন আগে থেকে তৈরি থাকা একটা বাণিজ্যিক রকেট ব্যবহার করা হয়েছিল।

আর এবার যে ফ্লাইটটি যাবে তাতে প্রথমবারের মতো আর্টেমিস এক্সপ্লোরেশন হার্ডওয়্যারটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষিত হবে। এসএলএস এবং ওরিয়ন কেনেডি স্পেস সেন্টারের উৎক্ষেপণ প্যাডে গত সপ্তাহেই স্থাপন করা হয়েছে।

প্রকৌশল ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত কর্মকর্তারা তারপর থেকে জ্বালানি, বৈদ্যুতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সংযোগ করেছেন যাতে কাউন্ট ডাউনের জন্য প্রস্তুত থাকা যায়।

ওরাইঅনকে চাঁদ ও একে ছাড়িয়ে মহাকাশে পাঠানো হবে ৪২ দিনের জন্য। আশা করা হচ্ছে, এটি পৃথিবীতে ফিরে আসবে ১০ অক্টোবর। ক্যালিফোর্নিয়া স্যানডিয়েগোর কাছে প্রশান্ত মহাগরে অবতরণ করবে এটি।

আর্টেমিস-২-এ প্রথম মনুষ্যবাহী মিশন পাঠানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ২০২৪ সালে। আর আর্টেমিস-৩ ২০২৫ সালের আগে চাঁদে যাবে না।

এসব মহাকাশ যাত্রার জন্য নাসা এখনো কোন মহাকাশচারীর নাম ঘোষণা করেনি। কিন্তু কয়েক দিন আগে তারা চন্দ্রপৃষ্ঠের একটি স্থানের ছবি প্রকাশ করেছে যেখানে ভবিষ্যৎ ক্রুদের পাঠানো হতে পারে।

সূত্র : বিবিসি