গাজীপুর নির্বাচনে তীব্র লড়াইয়ের আভাস

গাজীপুর নির্বাচনে তীব্র লড়াইয়ের আভাস

ফলাফলের অপেক্ষায় গাজীপুর

বাংলাদেশের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে যে ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে, তাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে।

ইভিএম জটিলতা

গাজীপুর থেকে বিবিসি সংবাদদাতা শাহনেওয়াজ রকি জানিয়েছেন, তিনি সারাদিন যেসব ভোটকেন্দ্র ঘুরেছেন, সেখানে মূলত আজমত উল্লা এবং জায়েদা খাতুনের মধ্যে প্রতিন্দ্বন্দিতা হতে পারে বলে মনে হয়েছে।এখন চলছে ভোট গণনার কাজ। ভোটগ্রহণ হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম-এর মাধ্যমে। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ইভিএম নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ার কথা জানিয়েছেন ভোটাররা।

গাজীপুর থেকে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা জানিয়েছেন, বিকাল ৪টায় ভোটগ্রহণ শেষ হবার কথা থাকলেও কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে তখনও পর্যন্ত অনেকে ভোট দিতে পারেননি।তাদের অভিযোগ, ইভিএম জটিলতায় ভোট দিতে দেরি হওয়ায় ভোট গ্রহণ হয়েছে ধীরগতিতে। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও তারা ভোট দিতে পারেননি বিকাল ৪টার মধ্যেও।

নির্বাচনের পরিবেশে নিয়ে ভোটারদের মধ্যে কোনও অভিযোগ না থাকলেও ইভিএম নিয়ে বেশ ক্ষোভ দেখা গেছে কেন্দ্রগুলোতে।গাজীপুর থেকে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন। অনেকেই বলেছেন ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে অনেকের আঙুলের ছাপ মিলতে দেরি হয়েছে।

তেমনই একজন ভোটার হানিফ সরকার বিবিসি বাংলার শাহনেওয়াজ রকিকে বলছিলেন “ইভিএমে প্রথমবার ভোট দিছি। ভোট দিতে গিয়ে বেশ বিড়ম্বনায় পড়ছি। আমার কাছ থেকে ছয়-সাতবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট চাইছে। ফিঙ্গারটা শো করতেছিল না। যারা অপারেটিং করতেছে তারাও হয়তো বেশি দক্ষ না। এরা আমাকে যেভাবে বলছে ওভাবেই দিছি। লাস্ট পর্যন্ত দিতে পারছি। আমার কাছে ইভিএম মানে বিড়ম্বনার একটা মেশিন”।ইভিএমের কারণ ভোট দিতে প্রত্যেকটা ভোটারের ১০-১৫ মিনিট সময় লেগেছে বলে জানান মি. সরকার।এরকম অভিযোগ এসেছে অনেক ভোটারের কাছ থেকেই।

ভোটকেন্দ্রে থাকা প্রিজাইডিং অফিসাররাও কিছু কেন্দ্রে টেকনিক্যাল সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া যারা ভোটার তাদের অনেককে বিশেষ করে বয়স্কদের ইভিএম এর ব্যবহার বুঝাতেও সময় লেগেছে বলে ভোট গ্রহণে ধীরগতি ছিল বলে জানান কর্মকর্তারা।আর ভোটগ্রহণ ধীরগতিতে এগুনোর কারণে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। যদিও ভোটকেন্দ্রে থাকা ভোটাররা বিকাল চারটার মধ্যে ভোট দিতে পারেননি- তবে তাদের সবাই ভোট নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

গাজীপুরে থাকা বিবিসির বাংলার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন নির্বাচনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার কথা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।সকাল আটটার দিকে ভোটকেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের লাইন চোখে পড়লেও সাড়ে আটটার পর থেকে ভিড় কমতে থাকে। তবে দুপুরের পর থেকে ভোটারদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

এজেন্টদের হুমকির অভিযোগ

বিবিসি বাংলার সংবাদদাতারা জানিয়েছেন হাতপাখা ও নৌকা ছাড়া অন্যান্য প্রার্থীদের এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে খুব কম দেখা গেছে।এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মেয়র প্রার্থী শাহনুর ইসলাম রনি।

“তারা রীতিমতো এমন ভয় পেয়ে গেছেন। একজন রাত্রিবেলা বাসা থেকে বের হয়ে গেছে, তার স্ত্রী-সন্তান আছে ঘরে। উনি অন্য মাধ্যমে আমাকে জানিয়েছেন যে নিরাপদে আছেন কিন্তু এজেন্ট আর থাকতে পারছেন না”- বলেন শাহনুর ইসলাম।টঙ্গিসহ গাজীপুরের অধিকাংশ জায়গায় এজেন্টদের ভয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, যার মা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। মি. আলম ভোট দেয়া শেষে বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবেন।

“অনেকেই গোপনে হুমকি দেয়ার চেষ্টা করেছে তাতে কিছু আসে যায় না। সরকার ও নির্বাচন কমিশন বলেছে তারা এই ভোটটা সুষ্ঠু করবে -শেষ পর্যন্ত দেখবো”।ইভিএমে ভোটগ্রহণে ধীরগতির প্রসঙ্গে মি.আলম বলেন “অনেকে হয়তো কৌশল অবলম্বন করবে, ভোটতো চারটায় শেষ। আমরা মনে করি তারা এটা তাড়াতাড়ি রেজাল্ট দিতে পারে। আমরা দেখবো এটা কি তারা রাতে দেয় নাকি দিনে দেয়। সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করবো”।

এর আগে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, এই নির্বাচনে ৪৮০টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৩৫১টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।পরে সেগুলোর নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য পুলিশের পাশাপাশি আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। একইসাথে সিসিটিভি ক্যামেরাও লাগানো হয়।গাজীপুর নির্বাচনে মোট আট জন প্রার্থী মেয়র পদের জন্য প্রতিযোগিতা করছেন।

এই নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজারের বেশি। নির্বাচন পরিচালনায় থাকছেন ৪৭৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, প্রায় সাড়ে তিন হাজার সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, প্রায় সাত হাজার পোলিং অফিসার এবং প্রায় ১২ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা।

এদিকে গাজীপুরে এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। দলটি বলছে, ২০১৮ সালের অভিজ্ঞতা থেকে তারা এ সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের ৫টি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে বলেই মনে করেন অনেকে।তফসিল অনুযায়ী দেশের ৫টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ২৫শে মে ভোট হবে গাজীপুরে। এরপর ১২ই জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ শে জুন সিলেট ও রাজশাহী সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্র : বিবিসি