গ্যাসের অভাবে জ্বলছে না চুলা

গ্যাসের অভাবে জ্বলছে না চুলা

ফাইল ছবি

গ্যাস সংকট ঢাকাবাসীর পুরনো সমস্যাগুলোর একটি। শীত এলে প্রতি বছরই সেই সংকট ভোগান্তিতে রূপ নেয়। এবার গ্যাসের সরবরাহ কমায় ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। রাজধানীর বেশির ভাগ আবাসিক এলাকায় এখন গ্যাসের অভাবে চুলা প্রায় জ্বলছেই না। রান্নার কাজ দূরের কথা, তীব্র গ্যাস সংকটে ঢাকাবাসী এই কনকনে শীতে গোসলসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পানিও গরম করতে পারছে না। গ্যাসের অভাবে ঢাকার সিএনজি স্টেশনগুলোয়ও মিলছে না পর্যাপ্ত গ্যাস। স্টেশনগুলোর বাইরে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। গ্যাস না থাকায় ঢাকা ও আশপাশের শিল্পকারখানাগুলোও এখন ধুঁকছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দু-তিন মাস ধরে রাজধানী ও আশপাশ এলাকায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। এর কারণ গত এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সবচেয়ে কম গ্যাস সরবরাহ করছে। শীতে ঠান্ডার তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাইপলাইনে গ্যাস জমে সংকট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশে বর্তমানে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৪২০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা সরবরাহ করছে ২৫৫ কোটি ঘনফুট। অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে ঘাটতি ১৬৫ কোটি ঘনফুট। আবার দেশি গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকেও দিন দিন উৎপাদন কমছে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৫০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু এলএনজি রূপান্তরের দুটি টার্মিনালের একটি মেরামত কাজের জন্য দুই মাস ধরে বন্ধ থাকায় গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন ডিভিশন) প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া জানান, একে শীত, অন্যদিকে গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে গ্রাহকের গ্যাসের যে চাহিদা তার তুলনায় সরবরাহ কম আছে। গ্যাসের উৎপাদন কম হওয়ায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, মেরামতের জন্য বন্ধ থাকা এলএনজি টার্মিনালটি শিগগিরই চালু হতে পারে। তখন গ্যাসের সরবরাহ বাড়লে সংকট কিছুটা কমবে। তবে গ্যাসের উৎপাদন না বাড়লে চলমান সংকটের সমাধান হবে না। আবার সামনেই সেচ মৌসুম। সে সময় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। এতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় বাড়তি গ্যাস দিতে হবে। এজন্য শিগগিরই গ্যাস সংকট কাটার সম্ভাবনা কম। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আলী আসগর দুই মাস ধরে গ্যাস সংকটে ভুগছেন। শীতের তীব্রতা বাড়ায় তার ভোগান্তি এখন চরমে। তিতাস গ্যাসের এই গ্রাহক বলেন, ‘আগে যে সামান্য গ্যাস পাওয়া যেত এখন তা-ও পাচ্ছি না। দিনের বেলা গ্যাসের চাপ থাকে না বললেই চলে। মাঝরাতে গ্যাস এলে তা দিয়েই বেশি করে খাবার বানিয়ে রাখেন আমার স্ত্রী।’

মগবাজারের বাসিন্দা কানিজ সিদ্দিকাও বেশ কয়েকদিন ধরে গ্যাস সংকটে ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘শীতে বাচ্চাকে গোসল করানোর জন্য গরম পানির প্রয়োজন কিন্তু গ্যাস না থাকায় বাসার চুলায় এখন আগুন ধরাতে পারছি না। আমরা বড়রাও টানা কয়েকদিন গোসল করতে পারিনি। রান্নার কাজ তো পরের কথা।’

বনশ্রীর বাসিন্দা শফিক আহমেদের ভোগান্তিও চরমে। তিনি বলেন, ‘গ্যাসের চাপ এতই কম যে চুলা জ্বালানো কষ্টের। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি বাসায় একসঙ্গে থাকি। গ্যাস না থাকায় বেশ কয়েকদিন হোটেলে খাবার খেয়েছি।’

রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা, ধানমন্ডি, উত্তরা, রামপুরা, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্যাস সংকটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাসাবাড়ির গ্রাহক গ্যাস না পেয়ে মাটির চুলা, লাকড়ি জ্বালিয়ে, ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহার করে কোনোমতে দিন পার করছে। কিন্তু শীতের কারণে তাদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। হোটেল-রেস্টুরেন্টের মালিকরা অবশ্য গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন।

সিএনজি পাম্পগুলোয় যদিও এখন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকে। কিন্তু এখন চাপ কমে যাওয়ায় গ্রাহকের ভোগান্তি আরও বেড়েছে। সিএনজি স্টেশনগুলোর বাইরে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। মালিবাগের সিএনজি চালক ওমর ফারুক বলেন, ‘পাম্পগুলো থেকে বলা হচ্ছে গ্যাসের চাপ কম। তাই প্রয়োজনের অর্ধেক গ্যাস পাচ্ছি। আগে একটি স্টেশন থেকে গ্যাস নিলেই হতো কিন্তু এখন একাধিকবার ভিন্ন ভিন্ন স্টেশন থেকে গ্যাস নিতে হচ্ছে।’ গ্যাস সংকটের প্রভাব পড়েছে শিল্পকারখানাগুলোয়ও। ঢাকার আশপাশের শিল্পকারখানাগুলো গ্যাস সংকটে ভুগছে। দিনের বড় অংশ কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকছে। -বাংলাদেশ প্রতিদিন