কুবিতে জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ডিঙিয়ে প্রক্টরের পদোন্নতি

কুবিতে জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ডিঙিয়ে প্রক্টরের পদোন্নতি

ফাইল ছবি

কুবি প্রতিনিধি: একের পর এক অনিয়মের সুবিধা ভোগ করার পর এবার জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ডিঙিয়ে পদোন্নতি পেয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। কোন ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তিনি ২০২২ সালে ২২ মার্চ মাসে প্রক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এছাড়াও তার পিএইচডি ডিগ্রি নথিভুক্তকরণ নিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটি সুপারিশ না করলেও উপাচার্য ড. এ এফ এম আব্দুল মঈনের নির্দেশে তা গ্রহণ করা হয়।

ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের কাজী ওমর ও মো. সাহেদুর রহমান সহকারী অধ্যাপক থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহযোগী অধ্যাপক হয়েছেন। তবে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোসা: শাহিনুর বেগম সকল ধরনের শর্ত পূরণ করলেও তার পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। মোসা. শাহিনুর বেগম সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রেজিস্ট্রার বরাবর ঐ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করেন প্রশাসনের এমন অনিয়মের ফলে ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে।

কুবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী হাসান বলেন, শিক্ষকদের পদোন্নতির যে নীতিমালা রয়েছে তার সকল শর্ত পূরণ করেছেন মোসা. শাহিনুর বেগম। এ দিকে যেই দু'জন জুনিয়র শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে তাদের একাডেমিক রেজাল্ট ও গবেষণা মোসা. শাহিনূর বেগম থেকে কম। উপাচার্য সুনির্দিষ্ট উপায়ে পরিকল্পিতভাবে এটি করেছেন। সিনিয়র শিক্ষককে বঞ্চিত করে জুনিয়র শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়ার ফলে একাডেমিক ডিসিপ্লিন নষ্ট হচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পেশার যে নিরাপত্তা রয়েছে তা সংকটে পড়ছে। প্রতিটি বিভাগেই তিনি (উপাচার্য) এ সকল কার্যক্রম করেছেন।

জানা যায়, মোসা. শাহিনুর বেগম ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আপ-গ্রেডেশন হয় সহকারী অধ্যাপক পদে এবং চাকুরি স্থায়ী হয় ২০১৯ সালে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক পদে আট বছরসহ শিক্ষকতায় মোট এগারো বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন এবং বিভিন্ন স্বীকৃত জার্নালে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মকালে চারটি প্রকাশনা থাকায় ২০২৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেন তিনি। পদোন্নতির জন্য গঠিত ভাইভা বোর্ডের নিকট চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি মৌখিক সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এর আগে Q1জার্নালে তার একটি আর্টিকেল প্রকাশনার জন্য নির্বাচিত হয়।

এছাড়াও গেল বছরের ১৫ নভেম্বর, মালয়েশিয়ার Putra Business School হতে পিএইচডি'র চূড়ান্ত ডিফেন্স-এ সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন তিনি। তার অভিযোগ, পদোন্নতির সকল ক্রাইটেরিয়া ফিল-আপ করার পরও তাকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। বরং তার দু'জন জুনিয়র সহকর্মীকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরিত আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পদোন্নতির নীতিমালা অনুযায়ী তিনি ২০২৩ সালের নভেম্বরে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন, সহকারী অধ্যাপক পদে আটবছরসহ শিক্ষকতায় মোট ১১ বছরের অভিজ্ঞতা থাকা এবং Q1 জার্নালে প্রকাশনা থাকা সত্ত্বেও চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০ তম সিন্ডিকেট সভায় তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু তার দুইজন জুনিয়র ( কনিষ্ঠ) সহকর্মীকে একই সিন্ডিকেট সভায় পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। বিধি অনুসারে প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে তাকে বঞ্চিত করার বিষয়টি নিয়মের সাথে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় তার ন্যায়সংগত অধিকার খর্ব হয়েছে এবং যা তাকে মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত করেছে। এর ফলে তার সামাজিক মর্যাদা ও সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সময়মতো পদোন্নতি বঞ্চিত হওয়ায় তিনি আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন হয়েছেন।

এ বিষয়ে ভু্ক্তভোগী শিক্ষিকা মোসা. শাহীনুর বেগম বলেন, সিনিয়র শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও সহকারী অধ্যাপক পদ থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদোন্নতির সকল ক্রাইটেরিয়া আমি ফিল-আপ করেছি। এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে উপাচার্য স্যারের সাথে তার দপ্তরে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, বোর্ড রিকমেন্ড করেনি।

এ দিকে ২৫ জানু্যারি অনুষ্ঠিত ৯০ তম সিন্ডিকেট সভায় পিএইচডি ডিগ্রী ছাড়াই দু'জন শিক্ষককে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে আপ-গ্রেডিং এর মাধ্যমে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না দেয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার একটি আবেদনপত্র তিনি পেয়েছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগতও করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে প্রতিবেদককে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন দপ্তরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এর পর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।