যেসব কারণে হালাল প্রাণীর গোশত হারাম হয়ে যায়

যেসব কারণে হালাল প্রাণীর গোশত হারাম হয়ে যায়

ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য কিছু পশু-প্রাণী ও পাখির গোশতে কল্যাণ ও উপকার রেখেছেন। যেমন- গরু, ভেড়া, ছাগল, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি। এসব পশু-পাখির গোশত খাওয়া হালাল। আর কিছু পশু-পাখির গোশত যেমন শুকর, শিয়াল, ইঁদুর, বিড়াল, কুকুর, ঈগল, বাজ, পেঁচা, মৃত প্রাণীর গোশত ইত্যাদি ইসলামি শরিয়তে হারাম।

হালাল প্রাণির গোশতও কখনো হারাম হয়ে যায়। যেসব কারণে হালাল প্রাণীর গোশত হারাম হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

১. বিসমিল্লাহ না বলা
ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ বা আল্লাহর নাম না নিয়ে জবাই করলে ওই প্রাণীর গোশত হারাম হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ ‘আর তোমরা তা থেকে আহার করো না, যার ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি এবং নিশ্চয় তা গর্হিত।’ (সুরা আনআম: ১২১)

২. খাদ্যনালী ও কণ্ঠনালী না কাটা
বিসমিল্লাহ বললেও পশুর খাদ্যনালী, কণ্ঠনালী না কাটলে ওই প্রাণির গোশত হারাম হয়ে যায়। পশু জবাইয়ের সঠিক পদ্ধতি হলো, জবাই করার সময় চারটি রগ কাটতে হবে। সে চারটি রগ হচ্ছে, শ্বাস নালী, খাদ্যনালী এবং শ্বাস নালীর দুই পার্শ্বের দুটি মোটা রগ। কোনো কারণে চারটি রগ না কেটে তিনটি কাটলে গোশত খাওয়া বৈধ হবে। কিন্তু তিনটির কম কাটলে সেই পশু বা পাখি মৃত বলে গণ্য হবে এবং তা খাওয়া বৈধ হবে না। কোরবানি শুদ্ধ হবে না। তবে যেকোনো তিনটি রগ কাটা গেলে কোরবানি শুদ্ধ হবে। (বেহেশতি জেওর, পৃষ্ঠা-৩৭৫; হেদায়া: ৪/৪৩৭)
এক্ষেত্রে আলেমদের পরামর্শ হলো- পশু নিজ হাতে জবাই করা উত্তম। যদি নিজে জবাই করতে না পারে তবে অন্যের দ্বারা জবাই করাবে। এ অবস্থায় নিজে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম। (ফাতাওয়ায়ে শামি: ৫/২৭২)

৩. গোশত নাপাকির সঙ্গে মিশে যাওয়া
গোশত নাপাকীর সাথে মিশে গেলে যেমন দোকানে ড্রেসিং করার সময় নাপাকির সঙ্গে গোশত মিশে গেলে ওই গোশত হারাম হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, ড্রেসিংয়ের কারণে মুরগির ভেতরের নাপাকির প্রভাব যদি গোশতে পৌঁছে না যায় বরং এর দ্বারা শুধু লোমকূপগুলো ঢিলা ও নরম হয়, তাহলে ওই মুরগির গোশত খাওয়া জায়েজ। সাধারণত এই নিয়মেই ড্রেসিং করার কথা। কিন্তু যদি বেশি সময় গরম পানিতে চুবিয়ে রাখার কারণে নাপাকির প্রভাব ও গন্ধ গোশতের ভেতর চলে যায়, সেক্ষেত্রে ওই মুরগির গোশত খাওয়া নাজায়েজ হয়ে যাবে। (ফাতহুল কাদির: ১/১৮৬; আল-বাহরুর রায়েক: ১/২৩৯; মাজমাউল আনহুর: ১/৯১; রদ্দুল মুহতার: ১/৩৩৪; আহসানুল ফতোয়া: ২/৯৬)

সতর্কতা হলো- যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবাই করে অথবা ইচ্ছাকৃত আল্লাহর নাম না নিয়ে জবাই করে, তাদের কাছ থেকে গোশত ক্রয় না করা। অমুসলিম দোকান কিংবা অমুসলিম প্রতিষ্ঠান থেকে গোশত না কেনা এবং হাঁস-ড্রেসিং না করা। আলেমদের পরামর্শ হলো— হালাল পশু-পাখি নিজে জবাই ও পরিষ্কার করা সবচেয়ে ভালো পন্থা। বস্তুত সতর্কতার মাধ্যমেই ব্যক্তির ঈমান ও আমল রক্ষা পায়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে সন্দেহজনক জিনিস থেকে বেঁচে থাকবে সে নিজের দ্বীন ও সম্মানকে রক্ষা করবে।’ (বুখারি: ৫২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হারাম থেকে দূরে থাকার এবং হালাল খাবার গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।