চীনের নতুন রণতরী ফুজিয়ান কি টেক্কা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ডকে

চীনের নতুন রণতরী ফুজিয়ান কি টেক্কা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ডকে

ছবি: সংগৃহীত

চীনের সর্বাধুনিক রণতরী ‘দ্য ফুজিয়ান’ প্রথমবারের মতো সমুদ্রে নেমেছে। সাংহাই থেকে পূর্ব চীন সাগরের উদ্দেশে বুধবার (১ মে) এই রণতরীটি পরীক্ষামূলক অভিযান শুরু করেছে। চীনের এই তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীকে টেক্কা দেবে কি—না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

গতকাল বুধবার (১ মে) এই তথ্য জানিয়েছে সিএনএন। প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ ও সর্বশেষ রণতরী ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড থেকে চীনের এই রণতরী কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে তা তুলে ধরা হয়েছে।

বুধবার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিনহুয়া জানায়, সমুদ্রে মহড়ার সময় রণতরীর প্রোপালশন ও ইলেকট্রিক সিস্টেমের নির্ভরযোগ্যতা ও স্থিতিশীলতা পরীক্ষা করা হবে।

২০২২ সালে এই যুদ্ধজাহাজের উদ্বোধন হলেও এবারই প্রথম সমুদ্রে পাঠানো হয়েছে ফুজিয়ানকে।

চীনের আগের দুই রণতরী শ্যানডং ও লিয়াওনিংয়ের পানি অপসারণ ক্ষমতা ছিল যথাক্রমে ৬৬ হাজার ও ৬০ হাজার মেট্রিক টন। বিপরীতে নতুন রণতরী ফুজিয়ানের পানি অপসারণ ক্ষমতা ৮০ হাজার মেট্রিক টন।

জিয়াংনান শিপইয়ার্ডে ফুজিয়ানকে নির্মাণ করতে মোট ছয় বছর সময় লেগেছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফুজিয়ানের চেয়ে বড় রণতরী রয়েছে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, তুলনা যদি করা হয় তাহলে পানি অপসারণের দিক থেকে জেরাল্ড আর ফোর্ড অনেক এগিয়ে। ফুজিয়ানের সক্ষমতা যেখানে ৮০ হাজার মেট্রিক টন অপসারণের, সেখানে জেরাল্ড আর ফোর্ড অপসারিত করতে পারে ১ লাখ মেট্রিক টন।

ফুজিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফিচার হলো তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্যাটাপাল্ট সিস্টেম, যার মাধ্যমে অপর দুই রণতরীর তুলনায় অপেক্ষাকৃত ভারী যুদ্ধবিমান এই জাহাজ থেকে উড়ে যেতে পারবে। পুরনো দুই রণতরীতে স্কি-জাম্প প্রক্রিয়া ব্যবহার হয়।

বিশ্লেষকদের মতে, নতুন এই ফিচারের কারণে চীন আরও বড় বড় যুদ্ধবিমানকে আরও বেশি দূরত্বে পাঠাতে পারবে, এবং একইসঙ্গে, এই বিমানগুলো আগের তুলনায় আরও বেশি গোলাবারুদ বহন করতে পারবে। সার্বিকভাবে, এই রণতরী চীনের নৌযুদ্ধ সক্ষমতাকে অনেকাংশ বাড়িয়ে তুলবে।

এই তড়িৎ-চুম্বকীয় ক্যাটাপাল্ট ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের একটিমাত্র রণতরীতে ব্যবহার হয়েছে, যার নাম ইউএএস জেরাল্ড আর ফোর্ড। মার্কিন নৌবাহিনীর বাকি ১০টি পুরনো রণতরীতে বাষ্প-চালিত ক্যাটাপাল্ট ব্যবহার করে যুদ্ধবিমান উৎক্ষেপণ করা হয়।

তবে মার্কিন রণতরীগুলোর বিশেষ একটি সুবিধা রয়েছে, যা চীনের তিন রণতরীর নেই। যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজগুলো পারমাণবিক শক্তিতে পরিচালিত। যার ফলে এগুলো দীর্ঘসময় সমুদ্রে থাকতে পারে। অপরদিকে, ফুজিয়ানে প্রথাগত জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে। যার ফলে, এই রণতরীকে নিয়মিত বিরতিতে কোনো বন্দর থেকে অথবা অন্য তেলের ট্যাংকার থেকে জ্বালানি সংগ্রহ করতে হয়।

যুদ্ধবিমান ধারণক্ষমতার দিক থেকেও এগিয়ে মার্কিন রণতরীটি। জেরাল্ড আর ফোর্ড যেখানে ৭৫টি যুদ্ধবিমান ধারণ করতে পারে, সেখানে ফুজিয়ানের সক্ষমতা ৬০ টিতেই সীমাবদ্ধ।

আরেকটি জায়গায় জেরাল্ড আর ফোর্ডের চেয়ে পিছিয়ে ফুজিয়ান। মার্কিন রণতরীটি যেখানে পরমাণু শক্তিচালিত সেখানে ফুজিয়ান এখনো প্রথাগত জ্বালানি নির্ভর। ফলে, রসদ ফুরিয়ে না গেলে জেরাল্ড আর ফোর্ডের তীরে ভেড়ার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু ফুজিয়ানের ধারাবাহিকভাবে সাগরে থাকতে হলে কোনো ওয়েল ট্যাংকারের সহায়তা নিতে হবে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভির (পিএলএএন) যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৩৪০টি। এর রাজনৈতিক কমিশনার ইউয়ান হুয়াঝি মার্চে জানান, চতুর্থ রণতরীর ঘোষণা খুব দ্রুতই আসতে পারে।

চতুর্থ রণতরীটি পারমাণবিক সক্ষমতা সম্পন্ন হবে কী না, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে এ মুহূর্তে সংখ্যায় চীন এগিয়ে থাকলেও, সক্ষমতার দিক দিয়ে এগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।