জিলহজের প্রথম ১০ দিন যেসব আমল ছাড়বেন না

জিলহজের প্রথম ১০ দিন যেসব আমল ছাড়বেন না

ফাইল ছবি

জিলহজ মর্যাদাপূর্ণ একটি মাস। এই মাসের প্রথম ১০ দিনের মর্যাদা, মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা কসম করে বলেন, ‘শপথ প্রভাতের। শপথ ১০ রাতের।’ (সুরা ফাজর: ১-২) তাফসিরবিদরা বলেন, এখানে ১০ রাত বলতে জিলহজের প্রথম দশককেই বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে ইবনে কাসির, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৩৫) 

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমলই উত্তম নয়।’ সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এই দশকের আমলের চেয়ে উত্তম নয়? রাসুল (স.) বললেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এর চেয়ে উত্তম নয়; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া, যে তার সর্বস্ব নিয়ে জিহাদে অংশগ্রহণ করল এবং কিছুই নিয়ে ফিরে এলো না’ (আবু দাউদ: ২৪৩৮; বুখারি: ৯৬৯)। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘মহান আল্লাহর কাছে জিলহজের ১০ দিনের চেয়ে উত্তম কোনো দিন নেই।’ (সহিহ ইবনে হিববান: ২৮৪২)

বেশি বেশি জিকির করা
এই দিনগুলোতে তাকবির (আল্লাহু আকবর), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। এসব দিনে জিকিরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে এই ১০ দিনের আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এই সময় তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবির (আল্লাহু আকবর) ও তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পাঠ করো।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ৩৪৭৪) 

নফল ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে জিলহজের প্রথম দশকের নেক আমলের চেয়ে বেশি প্রিয় অন্যকোনো দিনের আমল নেই। এ দিনগুলোর এক দিনের রোজা এক বছরের রোজার সমতুল্য এবং এক রাতের ইবাদত শবে কদরের ইবাদততুল্য।’ (তিরমিজি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা-১৫৮) 

কোরবানি পর্যন্ত নখ-চুল না কাটা
জিলহজ মাস শুরু হওয়ার আগে নখ, চুল, গোঁফ, বোগল-নাভির পশম ইত্যাদি কেটে নেওয়া উচিত। কেননা জিলহজ শুরু হলে এসব কাটা থেকে বিরত থাকা সুন্নত ও মোস্তাহাব আমল।  বিশেষ করে যারা কোরবানি করার সংকল্প করেছেন, তাদের উদ্দেশ্য করে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির কাছে কোরবানির পশু আছে সে যেন জিলহজের নতুন চাঁদ দেখার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।’ (মুসলিম: ৪৯৫৯, আবু দাউদ: ২৭৮২) এক দল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, এ কাজটি ওয়াজিব। তবে রাসুল (স.)-এর নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে, কাজটি গুরুত্বপূর্ণ, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

জিলহজ মাসে রোজার ফজিলত বেশি
জিলহজ মাসে রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। প্রথম ৯ দিন রোজা রাখা মোস্তাহাব আমল। বিশেষ করে নবম দিনের রোজা সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আরাফার দিনের (৯ তারিখের) রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে তিনি এর দ্বারা বিগত এক বছর ও আগামী বছরের গুনাহ মাফ করবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২; আবু দাউদ: ২৪২৫) 

হজ করা
আল্লাহ তাআলা যাদের তাওফিক দিয়েছেন তাদের জন্য জিলহজ মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো হজ করা। হজের ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমরা পরপর হজ ও ওমরা করো। কেননা, হজ ও ওমরা দারিদ্র ও গুনাহ মিটিয়ে দেয়, যেমন হাপরের আগুনে লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর হয়। কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (তিরমিজি: ৭৫৭)

কোরবানি করা
মনে রাখা দরকার, জিলহজ মাসের বিশেষ আমল হলো কোরবানি করা। এটি সামর্থ্যবানদের ওপর ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো’ (সুরা কাউসার: ২)। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে। (সহিহ বুখারি: ৬৪৯০; ইবনে মাজাহ: ৩১২৩) জিলহজ মাসের ১০ আমল

গুনাহ বর্জন করা
জিলহজ মাস হচ্ছে হজের মাস। এই মাসে গুনাহ থেকে মুক্ত থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অন্য মাসেও গুনাহ পরিত্যাগ করা উচিত। কিন্তু জিলহজ মাসে গুনাহমুক্ত থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হজের সময়ের পবিত্রতা রক্ষায় মহান আল্লাহ বলেন, ‘হজ নির্ধারিত মাসগুলোতে (অনুষ্ঠিত হবে)। অতঃপর কেউ এ মাসগুলোতে হজের ইচ্ছা করলে সে যেন হজের সময় স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ করবে না।’ (সুরা বাকারা: ১৯৭)

তাকবিরে তাশরিক
জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ তারিখ আসরে নামাজ পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের শেষে একবার করে বিশেষ তাকবির বলা ওয়াজিব। যাকে তাকবিরে তাশরিক বলা হয়। এই তাকবিরটি হলো— ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻛﺒﺮ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﻛﺒﺮ ﻭﻟﻠﻪ ﺍﻟﺤﻤﺪ উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওআল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। (দারু কুতনি: ১৭৫৬; ইরওয়াউল গালিল: ৬৫৪) 

তাওবা করা
বান্দা যখন নিজের অপরাধ বুঝতে পেরে সত্যিকার তওবা করে তখন আল্লাহ শুধু তার গুনাহই ক্ষমা করেন না; বরং গুনাহকে নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিন্তু যারা তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহগুলোকে নেকি দিয়ে পরিবর্তন করে দেবেন।’ (সুরা ফুরকান: ৭০) জিলহজ অতি মর্যাদাপূর্ণ মাস হওয়ায় মাসের শুরুতেই আন্তরিক তাওবা করে নিজেকে পবিত্র করে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন আলেমরা। 

দান-সদকা করা
দান-সদকা এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ নেক আমল। কিন্তু বিশেষ দিনে এর গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। তাই জিলহজ মাসে দান-সদকা করা বিশেষ সওয়াবের কাজ ও ফজিলতপূর্ণ আমল। অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজের সম্পদ দিনে বা রাতে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের কাছে আছে। তাদের কোনো ভয় নেই। তাদের কোনো চিন্তাও নেই।’ (সুরা বাকারা: ২৭৪) আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি ব্যয় করো, হে আদম সন্তান! আমিও তোমার জন্য ব্যয় করব।’ (বুখারি: ৫৩৫২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসের বিশেষ করে প্রথম ১০ দিনের ফজিলত বুঝার এবং বেশি বেশি ইবাদত করার তাওফিক দান করুন, আমিন।