জবাবদিহির ব্যাপারে ইসলামের সতর্কতা

জবাবদিহির ব্যাপারে ইসলামের সতর্কতা

ছবি: সংগৃহীত

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যেক মানুষ যার যার জায়গায় দায়িত্বশীল। দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা করলে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। এ ব্যাপারে ইসলাম বারবার মানুষকে সতর্ক করেছে। বলা হয়েছে, পরকালে জবাব দেওয়ার সময়টি হবে বড় কঠোর ও কঠিন।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। আর প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নেতা একজন দায়িত্বশীল, সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, সে তার পরিবারের লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের রক্ষক, তাকে তার রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।’ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘আমি এর সবই রাসুল (স.) থেকে শুনেছি। আমার ধারণা হয়, তিনি এ কথাও বলেছেন, ‘ছেলে তার পিতার সম্পত্তির রক্ষক এবং সে-ও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব, তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।’ (বুখারি: ২২৪৯; মুসলিম: ৪৫৭৩)

জিজ্ঞাসা করার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তাআলা জানেন না। বরং তিনি সবকিছুই জানেন। ‘আল্লাহর কাছে জমিন ও আসমানের কোনো কিছুই গোপন নেই।’ (সুরা আল-ইমরান: ৫) এমনকি ‘মানুষের চোখের চোরা চাহনি এবং তাদের অন্তরে যা কিছু লুকিয়ে থাকে, সবই তিনি জানেন।’ (সুরা মুমিন: ১৯)

তিনি সবকিছু অবগত থাকার পরও জবাব চাইবেন এবং এর ভিত্তিতে কেউ রেহাই পাবে, কেউ শাস্তির মুখোমুখি হবে। তাই দায়িত্বকে গুরুত্বপূর্ণ আমানত হিসেবে বিবেচনা করে ইসলাম। এক্ষেত্রে অবহেলা মোটেও কাম্য নয়। আনাস (রা.) বলেন, ‘এমন খুব কম হয়েছে যে, মহানবী (স.) ভাষণ দিয়েছেন— অথচ তাতে এ কথা বলেননি, যার মধ্যে আমানতদারি নেই তার ঈমান নেই। আর যার মধ্যে প্রতিশ্রুতি রক্ষার নিয়মানুবর্তিতা নেই, তার ধর্ম নেই।’ (মুসনাদে আহমদ: ১২৪০৬)

অতএব, দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে কোনোরকম প্রতারণা, ধোঁকাবাজি, ফাঁকি দেওয়া ও মিথ্যা বলা জায়েজ নেই। যেসব কাজে বাড়তি যোগ্যতা দরকার, সেসব কাজে যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা দায়িত্ব পালন করবেন—এটাই ইসলামের শিক্ষা। নবীজি (স.)-এর নেতৃত্ব পরিচালনার মূলনীতি ছিল কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও অর্থ-সম্পদ আল্লাহ ও মুসলিমদের আমানত। আল্লাহভীরু ও ন্যায়পরায়ণ লোকদের হাতে তা ন্যস্ত থাকবে। কেউ ইচ্ছামত তা নষ্ট করার অধিকার রাখবে না। এ আমানত যাদের হাতে সোপর্দ করা হবে তারা এর দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জবাবদিহি করতে বাধ্য। আল্লাহ বলেছেন, ‘আমানত বহনের যোগ্য ব্যক্তিদের হাতে আমানত সোপর্দ করার জন্য আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন।’ (সুরা নিসা: ৫৮)

কোরআনে নবীজি (স.)–কে পরামর্শের ভিত্তিতে কার্যনির্বাহ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি তাই মজলিসে শূরা বা পরামর্শ সভা গঠন করেন। আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে বিজ্ঞ সাহাবিরা ছিলেন সভার সদস্য। সদস্যদের সঙ্গে তিনি পরামর্শ করতেন, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। যদিও কোরআন তাঁকে ক্ষমতা দিয়েছে সে-সব পরামর্শ গ্রহণ না করার বা বর্জন করার। নবীজি (স.)-এর পরামর্শ গ্রহণের নীতি থেকে বোঝা যায়, নেতা পরামর্শ চাইবেন সংশ্লিষ্ট লোকেরাও পরামর্শ দেবে; কিন্তু তাঁর নিকট যে পরামর্শ বেশি সঠিক ও কল্যাণকর মনে হবে তা তিনি গ্রহণ করবেন।

নবীজি (স.) বলেছেন, নেতা হবেন জনগণের সেবক (মেশকাত: ৩,৯২৫)। তিনি তাঁর অনুসারীদের এভাবেই তৈরি করেছিলেন। ফলে প্রসাশনের বিভিন্ন স্তরে নিয়োজিত ব্যক্তিরা নিজেদের জনগণের সেবকের ভূমিকায় উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যার যার অবস্থান থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।