৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার ফলাফল বাতিলের দাবি

৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার ফলাফল বাতিলের দাবি

ছবি: সংগৃহীত

বিধি বহির্ভূত নিয়োগসহ বৈষম্যের অভিযোগ করে ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার ফলাফল বাতিলের দাবি জানিয়েছে নন-ক্যাডার পদপ্রার্থী চাকরি প্রত্যাশীরা। একইসঙ্গে পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হননি এমন প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ ভালিকা প্রকাশেরও দাবি জানিয়েছেন তারা।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এ সময় তারা মোট তিন দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৪৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) ক্যাডারভুক্ত পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করত। পরবর্তী সময়ে বিপিএসসি নন-ক্যাডার পদেও নিয়োগের সুপারিশ শুরু করে। যার ফলে ২০১০ সালে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা প্রণীত হয়। এতে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ ও সরকারি সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। ২৮তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত ক্যাডার পদ স্বল্পতার কারণে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে দক্ষ প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। যা সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সহায়তা করছে।

বৈষম্যের অভিযোগ করে বলা হয়, বিপিএসসি ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যাতে রেকর্ড ৪ লাখ ৩৫ হাজার ১৯০ জন প্রার্থী আবেদন করে। ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি ফলাফল প্রকাশ করা হয়। যেখানে ১৫ হাজার ২২৯ জন উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০২২ সালের ২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ১৫০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় এক হাজার ৮৪১ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। ভাইভা পরীক্ষাও গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত চলে। কিন্তু বিপিএসসি ৪৩তম বিসিএসের ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার ফলাফল একসাথে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। যা ২০২০ সালের বিজ্ঞপ্তির প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে। এ অবস্থায়, আমরা বিপিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করি এবং স্মারকলিপি দেই। কোন সাড়া না পেয়ে ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ঝিপিএসসি চত্বরে মানববন্ধন করি। এরপর একাধিক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।

সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর একইসাথে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে সুপারিশ করা হয়। যেখানে পূর্ণাঙ্গ তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি, যা বিধিমালার পরিপন্থী। দীর্ঘ তিন বছরের অপেক্ষার পর, বাংলাদেশ কর্ম কমিশন (পিএসসি) এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে। ক্যাডারের পাশাপাশি নন-ক্যাডারেরও ফলাফল একত্রে প্রকাশ করা হয়, যা আমাদের জন্য বৈষম্যপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার পদের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৩৪২টি পদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হলেও, চূড়ান্ত ফলাফলে মাত্র ৬৪২ জনকে সুপারিশ করা হয়। বিপিএসসি নন-ক্যাডার প্রার্থীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ না করে ৬৪২ জনকে সুপারিশ করেছে, যা বিধি বহির্ভূত। অথচ ৪১তম ও ৪০তম বিসিএসে যথাক্রমে ৩ হাজার ১৬৪ এবং ৩ হাজার ৬৫৭ জন নন-ক্যাডার প্রার্থীকে সুপারিশ করা হয়েছিল। এই বৈষম্যের চিত্র আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক। এর ফলে বিপুলসংখ্যক প্রার্থীকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে এবং যারা সুপারিশ পেয়েছেন তারাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের পছন্দের পদের বাইরে রয়েছেন।

এছাড়া বিজ্ঞপ্তির ১৩৪২টি পদের মধ্যে ৮৮৮টি পদ ৪১তম বিসিএস থেকে ফেরত আসা ছিল, ফলে নতুন পদ মাত্র ৪৫৪টি। ৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদগুলোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২৯২১টি পদের তালিকা (স্মারক নং- ০৫.০০.০০০০.১১২.১৬.০১৫.২৩-৬২) পাঠালেও পিএসসি এর মধ্যে অজানা কারণে বেশিরভাগ পদকে সুপারিশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেনি। বিশেষ করে নবম ও দশম গ্রেডের প্রথম শ্রেণির চাকরির পদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য সবচেয়ে বেশি।

এ অবস্থায় আন্দোলনরত নন-ক্যাডার পদপ্রার্থীরা ৩ দফা দাবি জানিয়েছেন। এগুলো হলো:

১. ভাইভার চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ কিন্তু পদস্বল্পতার কারণে ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হননি এমন প্রার্থীর পূর্ণাঙ্গ ভালিকা প্রকাশ এবং বিধি বহির্ভূত ৪৩তম বিসিএস নন-ক্যাডার ফলাফল বাতিল করা।

২. ২০২৩ এর নন-কাড়ার বিধি বাতিল করে ২০১০ এবং ২০১৪ এর সংশোধিত বিধি অনুযায়ী সুপারিশ করা।

৩. নতুনভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অধিযাচন পাঠিয়ে অধিকসংখ্যক পদ এনে ৪৩তম বিসিএসে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নন-ক্যাডার পদে সুপারিশের ব্যবস্থা করা।

বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার প্রার্থীদের নিয়োগ দিলে প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও সুশাসন বৃদ্ধি পাবে এবং স্মার্ট গভর্নেন্সের জন্য সৎ ও মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগ নিশ্চিত হবে। অধিক নিয়োগের ফলে সরকারি সেবার মান উন্নত হবে এবং জনগণ উন্নত সেবা পাবে। সহজ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে এবং বেকারত্ব কমিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি পূনর্বিবেচনা করবে বলে তাদের প্রত্যাশা। অন্যথায় তারা আরও কঠোর কর্মসূচি দেবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।