পর্দা ইসলামের ফরজ বিধান

পর্দা ইসলামের ফরজ বিধান

ছবি: সংগৃহীত

পর্দার বিধান মেনে চলা মুসলিমদের জন্য ফরজ। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য উৎকৃষ্ট পন্থা। তারা যা কিছু করে আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত এবং মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তবে যা এমনিতেই প্রকাশ পেয়ে যায় এবং তারা যেন তাদের ওড়নার আঁচল নিজ বক্ষদেশে নামিয়ে দেয়।’ (সুরা নূর: ৩০-৩১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা নিজগৃহে অবস্থান করো এবং (পরপুরুষের সামনে) প্রাচীন জাহেলি যুগের মতো সাজসজ্জা প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ (সুরা আহজাব: ৩৩)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, আপনি আপনার পত্নীদের, কন্যাদের ও মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব: ৫৯)

পর্দার বিধান পালন করলে যেমন শান্তি, সম্মান ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়, তেমনিভাবে তা লঙ্ঘন করলে হয় অসংখ্য ও অপূরণীয় ক্ষতি এবং দেখা দেয় ধর্মীয়, আত্মিক, পারিবারিক-সামাজিক অবক্ষয়, ধ্বংস ও বিপর্যয়। বেপর্দা ও বেহায়াপনার গুনাহ শুধু নিজের মধ্যেই সীমিত থাকে না; বেপর্দা নারীরাই শুধু এর ফলে ভোগান্তির শিকার হয় না, বরং এর দ্বারা অনৈতিকতা, অশ্লীলতা, জিনা-ব্যভিচার, ধর্ষণ ইত্যাদি সমাজে বিস্তার লাভ করে। গোটা সমাজ এর পার্থিব ধ্বংসাত্মক পরিণতি এবং আখেরাতের আজাব ভোগ করে। এজন্যই নবীজি (স.) বলেন, ‘নারীরা আবৃত থাকাই নিরাপদ। যখনই সে বেপর্দা অবস্থায় বের হয় তখন শয়তান তার দিকে উঁকি মেরে তাকায়। (তিরমিজি: ১/২২১)

কিছু মানুষের ধারণা, পর্দা শুধু নারীর জন্য। আসলে পর্দা পুরুষ-নারী উভয়ের জন্যই। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- ‘(হে নবী!) আপনি ঈমানদার পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য উত্তম পবিত্রতা রয়েছে।...’ (সুরা নুর: ৩০)

কোরআনের আয়াতটিতে বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে। কেননা জেনা-ব্যভিচারের প্রথম পদক্ষেপই হচ্ছে দৃষ্টি। হাদিসে এসেছে, ‘বেগানা নারীকে দেখা চোখের ব্যভিচার, তার সঙ্গে বেহুদা বা যৌন উদ্দীপক কথা হলো জিহ্বার ব্যভিচার, যৌন উদ্দীপক কথা শোনা কানের ব্যভিচার, স্পর্শ করা হাতের ব্যভিচার, পায়ের জেনা হলো ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা।’ (বুখারি: ৬২৪৩ ও মেশকাত: ৮৬)

হাদিসে পুরুষদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘পথের হকগুলোর একটি অন্যতম হক হলো, দৃষ্টিকে সংযত রাখা।’ (বুখারি: ৬২২৯)

চোখের পাপ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার হুঁশিয়ারি- ‘আল্লাহ চোখগুলোর অসততা এবং অন্তর যা গোপন করে তা জানেন।’ (সুরা গাফির: ১৯) 

মনে রাখা জরুরি- ইসলামের কোনো সাধারণ বিষয় নিয়েও হাসি-তামাশা করার অবকাশ নেই। অনেকের মধ্যে ইসলামি পোশাক টুপি, বোরকা, নেকাব ইত্যাদি নিয়ে রসিকতা করার বদভ্যাস রয়েছে। যা খুবই খারাপ দিক। এই বদভ্যাস বান্দার সব আমল বাতিল করে দেয়; এমনকি ইসলাম থেকেই বের করে দিতে পারে। এজন্যই আলেমরা সতর্ক করে বলেন, মুনাফেকদের প্রথম পরিচয় ছিল- তারা মুসলমানদের নিয়ে হাসি তামাশা করত, তাদের বোকা ভাবত। আল্লাহ পাক সেসব মুনাফেকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তারাই বোকা অথচ নিজেরা তা জানে না।’ (সুরা বাকারা: ১৩)

অতএব, আল্লাহর যেকোনো বিধানকে নিয়ে বিদ্রূপ করা যাবে না। যারা পর্দা করে তাদের বাধা দেওয়া ইসলামে নিষেধ। ইমাম ইবনে তাইমিয়া বলেন, ‘দ্বীনের যে কোনো স্পষ্ট বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করা কুফুরি; যে এমন করল তার ইমান ধ্বংস হয়ে কুফুরিতে পরিণত হল।’ এসব ঠাট্টাকারীদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন, তারা বলবে, আমরা একটু হাসি তামাশা করছিলাম। আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহকে নিয়ে এবং তার আয়াতসমূহ ও তার রাসুলকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছ? তোমরা কারণ দেখিয়ো না, তোমরা তো তোমাদের ঈমানের পরও কুফুরি করে ফেলেছো।’ (সুরা তওবা: ৬৫-৬৬)

আসলে পর্দাই মানুষের মন, মস্তিষ্ক, পরিবার, সমাজ ও পরিবেশকে সুন্দর, মার্জিত ও সুখময় রাখতে সহায়ক এবং পরকালীন প্রতিদান ও স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপন সুনিশ্চিত করে। সুতরাং পর্দার উপকারিতা অনস্বীকার্য। অতএব পর্দাকে উপেক্ষা না করে, পর্দার গুরুত্ব বুঝে বাস্তব জীবনে আমলে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা গোটা মুসলিম উম্মাহকে পর্দার বিধান পালনের ওপর অটল ও অবিচল থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।