আসছে শীত, আর এসময় নিজেকে সুস্থ রাখবেন যেভাবে
ছবিঃ সংগৃহীত।
শীতে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা থাকলেও, বাঙালির খাবারের উৎসব কিন্তু এই সময় শুরু হয়। পিঠা-পুলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম খাবারের পসরা দেখা যায় ঘরে ঘরে। এর মাঝে এমন কিছু খাবার আছে যা শরীরকে এই শীতে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন ছয়টি খাবার সম্পর্কে
মাটির নিচের সবজি
নামেই বলে দিচ্ছে এই সবজিগুলোর বৈশিষ্ট্য। মাটির নিচে জন্মে এই সবজি ‘রুট ভেজিটেবেলস’ নামেও পরিচিত। গাজর, আলু, বিটরুট, মুলা, মিষ্টি আলু এবং শালগম এআ শীতে খুব কার্যকর খাবার।
ঠান্ডার মাসগুলোয় এই সবজিগুলি সব চেয়ে পুষ্টিকর। যদিও প্রতিটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, প্রায় সব মাটির নিচের সবজির বিভিন্ন রকমের ভিটামিন, আয়রন এবং ফাইবারের আছে।
বিটরুট, গাজর এবং শালগমের সবজিতে প্রচুর পরিমাণ বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও এ-সহ প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা এই শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। সর্দি এবং ফ্লু থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন এই সবজিগুলা।
শালগম এবং মিষ্টি আলু হলো শীতের খুবই প্রয়োজনীয় খাবার। কারণ থার্মোজেনেসিস নামক একটি সহজ প্রক্রিয়া। এর মানে হলো যে খাবারগুলি হজম হতে বেশি সময় নেয় সেগুলি আপনার শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এই সবজিগুলো হজম হতে বেশি সময় নেই বলে শীতে আপনার শরীর উষ্ণ রাখতে এসব সবজি সাহায্য করে।
মশলা
বাঙালি হয়ে মশলা পছন্দ করে না এমন খুব কম মানুষই আছেন। আদা, জিরা, দারুচিনি, তিল, গোলমরিচ এবং হলুদ স্বাদের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
জিরা এবং আদা দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীর উষ্ণ রাখে। হলুদ লাল মরিচের চেয়ে কম মশলাদার, তবে এটি শরীরে তাপ উৎপাদন করে এবং এমনকি দুধ বা চায়ে যোগ করা যেতে পারে।
দারুচিনি মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায় এবং এটি চা, হট চকোলেট ও ল্যাটেসের মতো উষ্ণ পানীয়ের সাথে উপাদেয়।
গোলমরিচ (সাদা বা কালো) এবং তিল শীতকালে সুস্থ থাকার জন্য খুব দরকারি একটি মশলা। গোলমরিচ শীতের ফ্লু থেকে রক্ষা করে। তিল নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস এবং হাঁপানির মতো আরও গুরুতর শ্বাসযন্ত্রের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
চা
ঠান্ডা ঠান্ডা শীতে এক কাপ চা কার না পছন্দ। শীতে তুলশী, দারুচিনি, আদা ও লেবুর চা শরীর ও মনকে উষ্ণ রাখতে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
তুলসী খুবই গুণসম্পন্ন একটি পাতা যা রক্ত পরিষ্কার করার গুণআছে। তুলশীর চা বুক ব্যথা এবং গলা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
অন্যদিকে দারুচিনিতে শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি সাধারণ সংক্রমণের বিরুদ্ধেও লড়াই করে।
আদা ও লেবু চা শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে ঠান্ডার উপসর্গ থেকেও মুক্তি দেয় আদা চা। কিন্তু পিছিয়ে নেই লেবু চা-ও। রক্তচাপ কমানো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় লেবু চা। তাছাড়া ভিটামিন সি আপনার ইমিউন সিস্টেম এবং আপনার মেজাজ উভয়ই ভালো রাখবে।
মধু
মধুর রয়েছে প্রচুর আশ্চর্যজনক গুণাবলি যা শরীরকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত মধু খাওয়া বা পান করলে শীতে শরীর উষ্ণ থাকে। কিন্তু এটি রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে। মধুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়ালর বৈশিষ্ট্য। উষ্ণ পানিতে মধু খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
উষ্ণ পানিতে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে চিনিযুক্ত বা উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবারের আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পায়।
মধু হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে পারে এবং পেট জ্বালা-পোড়া কমাতে সাহায্য করে। উষ্ণ পানি দিয়ে খেলে এটি বদহজম দূর করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও মধুতে প্রিবায়োটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি করে থাকে।
মধুর প্রাকৃতিক শর্করা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে যা ব্যায়ামের পরে পেশি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়াও ঠান্ডায় গলা ব্যথা কমাতে মধু খুব উপকারী।
শুকনো ফল এবং বাদাম
ওটমিল বা সিরিয়ালের উপরে একটু বাদাম ছিটিয়ে দিতে পারেন। অথবা সারা দিন এগুলো স্ন্যাকস হিসেবেও খেতে পারেন। এতে অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলি এড়াতে সহজ হয়। বাদাম, কাজু এবং কিশমিশের মতো শুকনো ফল শরীরে তাপ তৈরি করে এবং আয়রনের ঘাটতি থাকলে তা বাড়াতে সাহায্য করে।
এছাড়া বাদাম, আখরোট, কাজু এবং পেস্তায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ট্রেস মিনারেল বেশি থাকে। মিছরিযুক্ত, লবণযুক্ত বা ট্রেইল মিক্সে অন্তর্ভুক্ত বাদামের পরিবর্তে কাঁচা, লবণহীন বা কম লবণের বিকল্পগুলি খাওয়াই ভালো। মাথায় রাখতে হবে এগুলো বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না।
ঘি
ঘি-এর নাম শুনে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটি স্বাস্থ্যের অনেক উপকারী। ঘি শুধু সহজে হজমযোগ্য ফ্যাট নয়, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফ্লু এবং সাধারণ সর্দি থেকে রক্ষা করে। ঘি হাড়কে শক্তিশালী করে থাকে। এছাড়াও ঘি শীতে ত্বককে মসৃণ করে। যাদের রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি তাদের অবশ্য ঘি বেশি না খাওয়াই ভালো।