পাপ একাকিত্ব ও ভয় বাড়ায়

পাপ একাকিত্ব ও ভয় বাড়ায়

পাপ একাকিত্ব ও ভয় বাড়ায়

গুনাহ বা পাপ অন্তরে এক ধরনের একাকিত্ব ও ভয় তৈরি করে। তখন আল্লাহর সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। এবং তার মধ্যে ও অন্য মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে এক ধরনের দূরত্ব জন্ম নেয়। তখন সে কারো সান্নিধ্যে আগ্রহী হয় না; বরং তাদের সান্নিধ্যে সে সমূহ অকল্যাণের আশঙ্কা করে। গুনাহ যতই বাড়বে এ দূরত্বও তত বৃদ্ধি পাবে।

গুনাহের প্রথম শাস্তি হলো মানসিক অস্থিরতা। পাপী নারী-পুরুষ আল্লাহর আনুগত্য ও নিষ্কলুষতার আনন্দ, স্বাদ ও প্রশান্তির কথা অনুধাবন করলে তারা বুঝত গুনাহের অর্জিত স্বাদের চেয়ে হারানো ঈমানের স্বাদ অনেক বেশি। তা ছাড়া গুনাহের শাস্তি দুনিয়ার পর আখিরাতেও অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ তাআলা কত সুন্দর বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা যাকে হিদায়াত দিতে চান, তার অন্তরকে তিনি ইসলামের জন্য প্রসারিত করে দেন। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার অন্তরকে তিনি সংকীর্ণ ও বক্র করে দেন, যেন সে আকাশে আরোহণ করছে, তেমনি আল্লাহ তাআলা যারা ঈমান আনেনি তাদের ওপর আজাব অবতীর্ণ করেন।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৫)

ঈমানদার লোকদের হৃদয় সর্বদা প্রফুল্ল ও প্রশস্ত থাকে। আর পথভ্রষ্টদের অন্তর সব সময় সংকীর্ণ, অস্থির, দুর্ভোগে আক্রান্ত ও বিপত্সংকুল হয়ে থাকে। তাই আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যাদের হৃদয় আমি জিকির থেকে বিমুখ করেছি এবং যে নিজের প্রবৃত্তের অনুসরণ করে আপনি তাদের অনুসরণ করবেন না, সে সব কাজেই সীমা লঙ্ঘন করে।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ২৮)

আল্লাহর অবাধ্য হয়ে যারা সুখ-শান্তির সন্ধানে থাকে, তাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে অশান্তি নেমে আসে। তাদের জন্য এই বিস্তৃত পৃথিবী সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। জীবনযাত্রা দুঃখ-দুর্দশায় ভরে ওঠে। এমনকি যে আরাম-আয়েশের জন্য তারা পরিশ্রম করে, তা-ই একসময় তাদের জন্য আজাব ও শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মূলত আল্লাহ তাআলা মানুষকে একটি দায়িত্ব পালনের জন্য সৃষ্টি করেছেন। এতে অবহেলা করলে জীবন অস্থিরতায় ভরে উঠবে। জীবন সঠিক গন্তব্যস্থল থেকে বিচ্যুত হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য।’ (সুরা : আজ জারিয়াত, আয়াত : ৫৬)

তাই মানুষ তার দেহ, মেধা ও প্রাণ অন্য কোনো কাজে ব্যয় করলে তার জীবনে নেমে আসে জাহান্নামের আগুনের মতো কষ্ট-ব্যথা। এ কারণে দেখা যায়, উন্নত বিশ্বের মানুষের জন্য আনন্দ-প্রমোদ ও ভোগ-বিলাসের অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনা থাকলেও তাদের অন্তরে নেই প্রশান্তির ছোঁয়া। সবার মধ্যে বিরাজ করে বিষণ্নতা ও অস্থিরতা। তা ছাড়া আত্মহত্যার প্রবণতা এসব দেশেই বেশি দেখা যায়। এর কারণ হলো, ‘আর যে আমার জিকির থেকে বিমুখ হয়, তার জীবনযাত্রা সংকীর্ণ ও দুঃখে ভরপুর হয়ে ওঠে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ১২৪)

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গুনাহগার ব্যক্তি ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং অস্বস্তিবোধ করে। আল্লাহর কাছ থেকে যে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার অন্তরে আল্লাহ তাআলা সার্বক্ষণিক ভীতি ঢুকিয়ে দেবেন।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি কাফিরদের অন্তরে ভীতি ঢুকিয়ে দেব, তারা আল্লাহর সঙ্গে শিরক স্থাপন করেছে, অথচ এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কোনো কিছুই অবতীর্ণ করেননি। তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং জালিমদের আশ্রয়স্থল কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫১)