বাবা-মায়ের মান্যতার হুকুম দেয় ইসলাম

বাবা-মায়ের মান্যতার হুকুম দেয় ইসলাম

প্রতীকী ছবি

সন্তানের কাছে বাবা-মায়ের মান্যতা থাকবে এমনই চায় ইসলাম। বাবা-মায়ের ইসলামী শরিয়তবিরোধী আদেশ ছাড়া সন্তানকে সবকিছুই মানতে হবে। 

আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি বাবা-মা তোমাকে চাপ দেয় আমার সঙ্গে কাউকে শরিক করার জন্য, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তাহলে তুমি তাঁদের কথা মানবে না। তবে পার্থিব জীবনে তাঁদের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলবে।’ সুরা লুকমান, আয়াত ১৫। 

বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানকে যেমন জীবদ্দশায় যত্ন নিতে হবে তেমন তাদের মৃত্যুর পরও সদাচরণের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এটি ইসলামের অপরিহার্য বিধান। বনু সালিমা গোত্রের এক ব্যক্তি রসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া নবী! আমার বাবা-মায়ের ইন্তেকালের পরও কি তাঁদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহারের কোনো দায়িত্ব অবশিষ্ট আছে? 

নবী (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে। তা হলো- ১. তাঁদের জন্য দোয়া করা। ২. তাঁদের গুনাহ ক্ষমার জন্য তওবা-ইসতিগফার করা। ৩. তাঁদের শরিয়তসম্মত অসিয়তগুলো আদায় করা। ৪. তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। ৫. তাঁদের বন্ধুবান্ধবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। এগুলো বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরও তাঁদের সঙ্গে উত্তম আচরণের শামিল।’ আবু দাউদ। 

হজরত মুসয়াব বিন সাদ বর্ণনা করেন, ‘আমার মা একদিন আমাকে কসম দিয়ে বললেন, আল্লাহ কি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দেননি? অতএব আল্লাহর কসম! আমি কিছুই খাব না ও পান করব না, যতক্ষণ না মৃত্যুবরণ করব অথবা তুমি মুহাম্মদ (সা.)-এর সঙ্গে কুফরি করবে। 

এভাবে তিন দিন পর যখন মায়ের মৃত্যুর উপক্রম হলো, তখন সুরা আনকাবুতে এ আয়াত নাজিল হলো, “আর আমরা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি যেন তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে। তবে যদি তাঁরা তোমাকে এমন কিছুর সঙ্গে শরিক করার জন্য চাপ দেয়, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে তুমি তাদের কথা মান্য করো না। আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। এরপর আমি তোমাদের জানিয়ে দেব যেসব কাজ তোমরা করতে”।’ সুরা আনকাবুত, আয়াত ৮। 

বাবা-মায়ের জীবদ্দশায় যেমন তাঁদের সেবা করা জরুরি তেমন তাঁদের মৃত্যুর পরও তাঁদের জন্য দোয়া করা দরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তুমি বল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।’ সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৪। 

বাবা-মা অসুস্থ হলে করণীয় হলো তাঁদের সেবা করা, উত্তম আচরণ করা, মনে কষ্ট না দেওয়া, চাওয়া-পাওয়া পূরণ করা। আল্লাহ রব্বুল আলামিন সবাইকে বাবা-মায়ের বাধ্য, অনুগত সন্তান হিসেবে তাঁদের সেবায় আমাদের কবুল করুন। আল্লাহ আমাদের বাবা-মাকে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে দিন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।