যে পোকা কামড়ানোর পর মাংস খেলে বিপদ হতে পারে

যে পোকা কামড়ানোর পর মাংস খেলে বিপদ হতে পারে

যে পোকা কামড়ানোর পর মাংস খেলে বিপদ হতে পারে

এক গবেষণা বলছে বিরল মিট অ্যালার্জি অর্থাৎ মাংস থেকে অ্যালার্জির প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে বাড়ছে, আর এর পেছনে কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে একটা পোকার কামড়। গবেষকরা বলছেন এরইমধ্যে অন্তত সাড়ে চার লাখ মানুষ এতে আক্রান্ত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বৃহস্পতিবার কিছু নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে যাতে দেখা যাচ্ছে যে হঠাৎ করে আলফা-গাল সিনড্রোমে আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে গিয়েছে। আলফা-গাল সিনড্রোম হল জীবনের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এক অ্যালার্জি, যার লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় ‘রেড মিট’ গ্রহণের পর।অনেক ধরণের মাংস বা পশুর পণ্য থেকে এই অ্যালার্জি হয় এবং এর উপসর্গগুলো জীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এই আলফা-গালের অস্তিত্ব পেয়েছেন একটা বিশেষ প্রজাতির ‘লোন স্টার টিক’ এর স্যালিভায়।

এই পোকার পিঠে একটা সাদা দাগ থাকে এবং এটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে দেখা যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তারা অন্যদিকেও ছড়াচ্ছে।এই লোন স্টার যেটাকে আগে অ্যামব্লায়োমা অ্যামেরিকানম বলা হত, এটি যখন কোন মানুষকে কামড় দিয়ে রক্ত চোষে, সেই মানুষটি কিছু নির্দিষ্ট মাংস ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর কোন পণ্য গ্রহণ করলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

যারা আলফা-গাল সিনড্রোমে ভুগছেন তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাবারের তালিকায় আছে গরুর মাংস, শূকরের মাংস, খরগোশ, ভেড়া, হরিণের মাংস, জেলাটিন, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য এবং কিছু ওষুধ পত্র।এখন পর্যন্ত এই সিনড্রোম সম্পর্কে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে তাতে এর লক্ষণগুলো হল পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, চুলকানি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা যা আরেক ভয়াবহ অ্যালার্জিক অবস্থা অ্যানাফাইল্যাক্সিস পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।

তবে ব্যক্তি ভেদে আলফা-গাল সিনড্রোমের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, যা হালকা থেকে মারাত্মক এমনকি কারো কারো ক্ষেত্রে জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। সিডিসি বলছে অ্যানাফাইল্যাক্সিস হল জীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ, এটি মানবদেহের অনেকগুলো প্রত্যঙ্গের উপর ফেলে, তাই এমন ক্ষেত্রে রোগীর জরুরী চিকিৎসা সেবা দরকার হতে পারে।তবে সিডিসি এটাও বলছে কারো আলফা-গাল সিনড্রোম হলেই তার শরীরে অ্যালার্জির উপসর্গগুলো নাও দেখা দিতে পারে। কারণ শরীরে মাংস যদি ধীরে ধীরে হজম হয় তাহলে এই অ্যালার্জির লক্ষণ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

সিডিসি জানিয়েছে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার এমন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর শনাক্তের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার করে বৃদ্ধি পেয়েছে।যেহেতু এটা শনাক্ত করা কঠিণ তাই সিডিসি বলছে অন্তত সাড়ে চার লাখ অ্যামেরিকান এই আলফা-গাল থেকে মিট অ্যালার্জির শিকার।

গত বছর ১৫০০ জন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীর উপর চালানো এক জরিপে দেখা যায় তাদের মধ্যে ৪২ শতাংশই এই সিনড্রোমের ব্যাপারে কিছুই শোনেনি।এই জরিপের ফলাফলও সিডিসি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করে, যাতে দেখা যায় তাদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ এই রোগ শনাক্ত করার ব্যাপারে ‘খুব একটা আত্মবিশ্বাসী নয়’। মাত্র ৫ শতাংশ জানায় তারা এটির মোকাবেলায় ‘পুরো আত্মবিশ্বাসী’।

এই সিনড্রোমটি ২০০৮ সালে দুর্ঘটনাক্রমে আবিষ্কার হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক ক্যান্সার চিকিৎসায় একটা ওষুধের পরীক্ষা করতে গিয়ে এটি দেখতে পান।প্যারালাইসিসি টিক নামে আরেক প্রজাতির পোকা থেকে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অঞ্চলে একই রকম অ্যালার্জির প্রকোপ দেখা গিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা সবাইকে সতর্ক করছেন বাইরে বের হবার সময় শরীর ঢেকে বের হবার জন্য এবং নিয়মিত লক্ষ্য রাখতে যে কোন পোকা কামড়ালো কি-না। টিক বাইট থেকে আরো মারাত্মক ধরণের অসুস্থতা হতে পারে – যেমন লাইম ডিজিজ যা এক রকম ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আর এটি গরমকালে বেশি দেখা যায়।সিডিসি পরামর্শ দিয়েছে ঘরের বাইরে পোকামাকড় প্রতিরোধক ব্যবহারের জন্য, যেগুলোতে ডিইইটি আছে অথবা কাপড়ে পারমেথ্রিন নামে বিশেষ কেমিকেল ব্যবহারের জন্য।

সূত্র : বিবিসি