গরমের রোজায় সাহাবিরা যা করতেন
ছবি: সংগৃহীত
প্রিয়নবী (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম গরমের মৌসুমে স্বাচ্ছন্দ্যে রোজা, তারাবিহসহ সব ইবাদত চালিয়ে গেছেন। গরমকালে দিন বড় হওয়ার কারণে কোরআন তেলাওয়াতসহ বিভিন্ন আমল বেশি পরিমাণে করা যায়—সেজন্য তারা খুশি থাকতেন। তাঁরা আল্লাহর জন্য কষ্ট করতে পছন্দ করতেন। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কখনও মাথায় বা শরীরে পানি দিতেন। কিন্তু কখনও রোজা পরিত্যাগ করতেন না, অতীষ্ট হতেন না এবং বিরক্ত হতেন না।
তাঁরা জানতেন আল্লাহর জন্য কষ্ট কখনও বৃথা যায় না। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (স.) ওমরা আদায়ের ক্ষেত্রে আয়েশা (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তোমার কষ্ট ও খরচ অনুযায়ী তোমাকে সওয়াব দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ১৭৮৭)
তাছাড়া কষ্ট হলেও আল্লাহর জন্য সন্তুষ্ট থাকা অনেক বড় আমল। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের ভেতর এমন লোকও আছে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আত্মবিক্রয় (উৎসর্গ) করে থাকে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।’ (সুরা বাকারা: ২০৭)
তাপমাত্রা বেড়ে পেলে নবীজি (স.) কখনো কখনো শারীরিক শীতলতার জন্য মাথায় বা শরীরে পানি দিতেন। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছতেন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ‘আল-আর্জ’ নামক স্থানে পিপাসার কারণে বা গরমের তীব্রতায় রোজা অবস্থায় মাথায় পানি ঢেলেছেন। (আবু দাউদ: ২৩৬৫)
এ হাদিস সম্পর্কে ‘আউনুল মাবুদ’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, এতে দলিল পাওয়া যায় যে, রোজাদারের জন্য গায়ের কিছু অংশে অথবা সারা শরীরে পানি ঢেলে গরম দূর করা জায়েজ আছে। অধিকাংশ আলেম এ মতই পোষণ করেন। দৈহিক প্রশান্তি ও স্বস্তি লাভের জন্য এমনটা করা দোষণীয় নয়। এর ফলে রোজাদারের ইবাদতের স্পৃহা বাড়বে। পূর্ণ গোসল, কাপড় ভেজানো, পানিতে ডুব দেওয়া- সবই মাথায় পানি ঢালার হুকুমভুক্ত।
সাহাবায়ে কেরামদের থেকেও গরমে এভাবে শারীরিক শীতলতা অবলম্বনের বর্ণনা পাওয়া যায়। ইমাম বুখারি (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) রোজা থাকা অবস্থায় কাপড় ভিজিয়ে সেটা গায়ে দিয়েছেন। ইমাম শাবী রোজা রেখে হাম্মামখানা বা গোসলখানায় প্রবেশ করেছেন। ইমাম হাসান বলেন, ঠান্ডার জন্য গোসল করা রোজাদারের জন্য জায়েজ। (ফাতহুল বারি)
গরমকালের রোজার একটি বড় উপকার হচ্ছে, তীব্র গরম জাহান্নামের তীব্রতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এসময় মহান আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। যেমন— أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظِيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ উচ্চারণ: ‘আসতাগফিরুল্লাহাল আজিমাল্লাজি লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহি।’ অর্থ: ‘মহান আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁর কাছে তাওবা করি।’ এ দোয়াটি সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়ে, তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও সে রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে থাকে। (তিরমিজি: ৩৫৭৭)
আর রমজানের শেষ দশটি রাতে একটি দোয়া অধিক পরিমাণে পাঠ করা উচিত। দোয়াটি হলো— اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন কারীম, তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা’ফু ‘আন্নী’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, মহানুভব! তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলব?’ নবীজি তখন এই দোয়াটি পড়তে বলেন।’ (তিরমিজি: ৩৫১৩)
অতএব, পরকালে সাফল্য প্রত্যাশী ও মুক্তিকামী প্রতিটি ঈমানদারের ওপর অবশ্য কর্তব্য হলো- গরমের অজুহাতে রোজা পরিত্যাগ না করা এবং বিরক্ত না হওয়া। আর এমনটি করা প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। বরং উচিত হলো রোজার গুরুত্ব-মর্যাদা ও বিশাল সওয়াব প্রাপ্তির আশায় ধৈর্যের সঙ্গে রোজা পালন করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।