আজ বিশ্ব বাঘ দিবস

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস

ছবি:সংগৃহীত

আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এই বাঘ বসবাস বাংলাদেশে অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে রয়েছে। আজ ২৯ জুলাই সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বাঘ দিবস। বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হলেও বাঘ টিকে আছে বিশ্বে এমন ১৩টি দেশে। এদিকে বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা সামান্য বাড়েছে।

বিশ্বজুড়ে বাঘের বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা দিনের পর দিন কমেই চলেছে। বহু জাতির বাঘ আজ বিলুপ্ত প্রায়। বিভিন্ন প্রজাতির বাঘকে অস্তিত্ব সঙ্কট থেকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘ সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়।

বাঘ এমন একটি প্রাণী যে তৃণভূমি, তুষারময় বন, ম্যানগ্রোভ জলাভূমি সহ বিভিন্ন জায়গায় অবাধে বেঁচে থাকতে পারে। বাঘ অন্য প্রাণীদের স্বীকার করে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তবে এত কঠিন অভিযোজন যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ২০ শতকের শুরু থেকে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি কমে গেছে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ অনুসারে, সারা বিশ্বে বাঘের সংখ্যা বর্তমানে মাত্র ৩ হাজার ৯০০, যা সত্যি উদ্বেগের বিষয়।

 

২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ অভিবর্তনে এ দিবসটির সূচনা হয়। তবে তারও অনেক আগে ১৯৭৩ সালে বাঘের সংখ্যা পুনর্জীবিত করার জন্য প্রথম প্রকল্প টাইগার চালু করা হয় ভারতে। ২০১০ সালে ১৩ টি দেশ, যেখানে বিরল প্রজাতির বাঘ পাওয়া যায়, সেই সব দেশের বাঘের সংখ্যাকে ২০২৪ সালের মধ্যে দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা হয়। ২০১৭ সালে আইইউসিএন মহাদেশীয় বাঘ এবং সুন্দরবন দ্বীপের বাঘকে বাঘের উপর প্রজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০২৪ সালে ডব্লিউডব্লিউএফ বন্য বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রাখে।

এরমধ্যে নেপাল বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। ভারত এবং ভুটানও দ্বিগুণের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা সামান্য বাড়লেও সে লক্ষ্য থেকে দূরে আছে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘ ছিল। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি ও এর দুই বছর পর ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়।

১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বিভাগ। পরের বছর ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান। ২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা ৩৫০টি থেকে ৪০০টি উল্লেখ করা হয়। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়। ২০১৫ সালের জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে দাঁড়ায় ১০৬টিতে। হঠাৎ করে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা ৪০০টি থেকে ১০৬টিতে এসে দাঁড়ালে সারা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়।

২০১৮ সালে সর্বশেষ জরিপে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। কিন্তু পূর্ব সুন্দরবনে ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় আড়াই বছরের ব্যবধানে ৪টি বাঘের মৃত দেহ উদ্ধার করে বনবিভাগ। অপরদিকে ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি পাচারকালে ১টি বাঘের চামড়াসহ এক পাচারকারীকে আটক করে র্যাব-৮ ও বনবিভাগ। পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে বাঘের একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ এবং র্যাব-৬ একই রেঞ্জ থেকে চলতি বছরে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করে। এ হিসাব থেকে কমে গেল ৭টি বাঘ। এ মুহূর্তে সুন্দরবনে কয়টি বাঘ আছে তার সঠিক হিসাব নেই বনবিভাগের কাছে। বর্তমানে বাঘের সংখ্যা কত তা জানা যাবে এ বছরের সেপ্টেম্বরে।