কুমিল্লার বন্যার পানি প্রবেশ করছে চাঁদপুরে, বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত

কুমিল্লার বন্যার পানি প্রবেশ করছে চাঁদপুরে, বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত

ছবি:সংগৃহীত

কুমিল্লার লাকসামের ডাকাতিয়া নদী থেকে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে চাঁদপুরের শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ ও সদর উপজেলারয়। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে পানির নিচে। পাশাপাশি থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে পুরো জেলায়। এতে সময় যত যাচ্ছে এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সরেজমিনে বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই উঠেছেন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। আবার অনেকের গন্তব্য স্বজনদের বাড়ি। অনেকেই ছুটছেন অজানা গন্তব্যে। অনেকে আবার চকির ওপর রান্নাবান্না করে ঘরেই অবস্থান নিয়েছেন। অনেকের উঠানে জোয়ারের পানি থই থই করছে। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকা এলাকাগুলোতে মাটির চুলায় রান্না বন্ধ হয়ে আছে। এ ছাড়া রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবনে। এতে বন্যার রূপ নিয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি ও ডাকাতিয়া নদীর জোয়ারের পানি চাঁদপুরের শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ ও সদর উপজেলার মধ্যে শাহরাস্তি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসতবাড়ি, মাঠ-রাস্তাঘাট, বীজতলা ও ফসলি খেত ডুবে গেছে। নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হচ্ছে।

শাহরাস্তির স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো মাছের ঘের ছিল। সেগুলোর পাড় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। শেষ সম্বলটুকু নিয়ে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাচ্ছেন। গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে আমাদের ঘর বাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কোথাও সুন্দরভাবে চলাফেরা করতে পারছি না। বাড়িতে রান্নাঘরের চুলা তুলিয়ে যাওয়ায় বোতলের গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে। গ্যাসের দামও বেড়েছে। তেরো শত টাকার গ্যাস পঁচিশ শত টাকা দিয়ে ক্রয় করতে হচ্ছে। তা ছাড়াও পুকুরের মাছগুলো চলে গেছে।’

এ দিকে সূচিপারা ডিগ্রি কলেজের আশ্রয় কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রান্তর বলেন, ‘শাহরাস্তির অবস্থা ভালো নেই। আশ্রয় কেন্দ্রে প্রতি মুহূর্তে লোক সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম এই আশ্রয় কেন্দ্রে মাত্র ৯ জন আসে। পরে মানুষের সংখ্যা বেড়ে এখন সবমিলে ৩৮০ জন আছে। এখানের মানুষগুলো খেটে খাওয়ার মানুষ। তাদের জমানো টাকা নেই। যার কারণে এসব মানুষ অসহায় হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও যাদের গরু, ছাগল, হাস, মুরগি আছে, তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।’

শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এই পর্যন্ত ৭ শতাধিক পরিবার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে আরও পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও উপজেলার পৌরসভাসহ সব স্থানে কম-বেশি জলাবদ্ধতা হয়েছে। আমরা এসব লোকদের সহযোগিতায় কাজ করছি। অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘কুমিল্লার লাকসামের ডাকাতিয়া নদী থেকে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে চাঁদপুরে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে শাহরাস্তির এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও হাজিগঞ্জ ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।’