নোবেল পুরস্কার না পাওয়া ৫টি যুগান্তকারী আবিষ্কার

নোবেল পুরস্কার না পাওয়া ৫টি যুগান্তকারী আবিষ্কার

ছবিঃ সংগৃহিত

নোবেল পুরস্কার বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শান্তির ক্ষেত্রে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। আলফ্রেড নোবেলের নামে প্রবর্তিত এই পুরস্কারগুলো প্রতি বছর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে প্রদান করা হয়, যারা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তবে এমন অনেক আবিষ্কার রয়েছে, যা অসাধারণ ও যুগান্তকারী হলেও এখনো নোবেল কমিটির নজরে আসেনি। আজকে আমরা জানবো এমন ৫টি আবিষ্কার সম্পর্কে, যা নোবেল পুরস্কারের জন্য যোগ্য হলেও এখনো পুরস্কার পায়নি। খবর সিএনএনের।

১. প্রথম মানব জিনোম ম্যাপিং

মানব জিনোম ম্যাপিং প্রকল্পটি একটি বিশাল বৈজ্ঞানিক সাফল্য। ১৯৯০ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি ২০০৩ সালে সম্পন্ন হয়, যা মানব জীবনের জেনেটিক কোড উন্মোচন করে। এই প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান এবং চীনের হাজার হাজার গবেষক অংশ নেন।

এই গবেষণার মাধ্যমে জীববিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন আসে। তবে নোবেল পুরস্কার এখনো এই প্রকল্পকে মূল্যায়ন করেনি। একটি কারণ হতে পারে এর সাথে অসংখ্য ব্যক্তির জড়িত থাকা। নোবেল পুরস্কারের নিয়ম অনুযায়ী সর্বাধিক ৩ জন ব্যক্তিকে একসাথে পুরস্কৃত করা যায়, যা এই ধরনের বৃহৎ প্রকল্পের ক্ষেত্রে একটি সীমাবদ্ধতা তৈরি করে।

২. স্থূলতা চিকিৎসায় বিপ্লব

সম্প্রতি, জিএলপি-১ হরমোনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি ওষুধগুলো স্থূলতা এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় বিপ্লব এনেছে। বিশ্বব্যাপী প্রতি ৮ জন মানুষের একজন স্থূলতায় ভুগছেন, যা ১৯৯০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। এই ওষুধ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং ক্ষুধা কমায়, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।

এটি তৈরির পেছনে ৩ জন বিজ্ঞানী ছিলেন—স্ভেতলানা মজসোভ, ড. জোয়েল হাবেনার এবং লোতে বিয়েরি। তারা জিএলপি-১ আবিষ্কার ও তা কার্যকর ওষুধে পরিণত করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। যদিও তারা সম্প্রতি লাস্কার-ডেবাকি ক্লিনিকাল মেডিকেল রিসার্চ পুরস্কার পেয়েছেন, নোবেল পুরস্কার এখনো তাদেরকে বিবেচনা করেনি।

৩. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (এআই) বিপ্লব

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্রুত আমাদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিচ্ছে। এআই-এর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক গঠন বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছেন, যা জিনতত্ত্ব, ওষুধ ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রগতি ত্বরান্বিত করেছে।

গুগলের ডিপমাইন্ডের বিজ্ঞানী ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার এই ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের তৈরি ‘আলফা ফোল্ড’ প্রোটিন গঠন বিশ্লেষণের জন্য একটি বিশাল তথ্যভাণ্ডার তৈরি করেছে, যা ২০ লক্ষাধিক গবেষককে প্রোটিন গঠনের পূর্বাভাস দিতে সহায়তা করছে। এই কাজটি নোবেল পুরস্কারের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হলেও, কেবলমাত্র নতুন ক্ষেত্র হওয়ায় নোবেল কমিটি হয়তো কিছুটা সময় নিচ্ছে।

৪. মানব দেহের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম

মানবদেহের অন্ত্রের ভেতর বাস করে কোটি কোটি জীবাণু—যা মানব স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। মাইক্রোবায়োম গবেষণা দীর্ঘদিন ধরে নোবেল পুরস্কারের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হলেও এখনো তা পুরস্কৃত হয়নি।

এই গবেষণার অন্যতম পথপ্রদর্শক ড. জেফরি গর্ডন, যিনি অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম ও অপুষ্টি নিয়ে গবেষণা করে দেখিয়েছেন, কীভাবে অন্ত্রের জীবাণুগুলো শিশুদের স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। তার গবেষণায় উন্নত অন্ত্র স্বাস্থ্যের জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যা বিশেষ করে বিশ্বের অপুষ্টিতে ভোগা প্রায় ২০০ মিলিয়ন শিশুর জন্য আশার আলো।

৫. ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জিনের আবিষ্কার

১৯৭০-এর দশকে, ক্যান্সার পরিবারে বংশগতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হলেও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে তা তেমনভাবে ধরা পড়েনি। কিন্তু ড. মেরি-ক্লেয়ার কিং তার গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেন, বিআরসিএ ১ জিনের মিউটেশনের সঙ্গে ব্রেস্ট ও ওভারি ক্যান্সারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

তার আবিষ্কার নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি চিহ্নিত করতে এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করেছে। এই গবেষণার ফলে নারীরা আরো দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নিতে পারছেন এবং তাদের জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা বেড়েছে। যদিও এই আবিষ্কার এখনো নোবেল পুরস্কার পায়নি, এটি নিঃসন্দেহে নোবেল-যোগ্য।

নোবেল পুরস্কার সাধারণত গবেষণার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ও তাৎপর্য বুঝে প্রদান করা হয়। উপরোক্ত আবিষ্কারগুলো বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা ভবিষ্যতে অবশ্যই নোবেল কমিটির নজরে আসবে বলে আশা করা যায়।